জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে জামিন বিরোধিতায় মাদক মামলায় জামিন না দেয়ায় উচ্চআদালতের দুটি নজির পেশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন হচ্ছে কিনা, তা জানার জন্য হাইকোর্টের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্ট ছিল দেশের মানুষের। তবে সব জল্পনা শেষ করে নিম্ন আদালত থেকে মামলার রায়ের নথি হাইকোর্টে পৌঁছানোর পর আদেশ দেয়া হবে কার্যক্রম মুলতবি করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে।
খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন উপস্থিত হয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজ্জাক খান, মীর মো. নাছির উদ্দিন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও কায়সার কামাল।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে আছেন খুরশিদ আলম খান।
এরআগে দুপুর ২টা ১২ মিনিটে দুই বিচারপতি বেঞ্চে বসেন। তখন এজলাসকক্ষ আইনজীবীতে পরিপূর্ণ ছিল। কোথাও কোনো তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আইনজীবীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলায় কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না।
এমন সময় আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আদালত কক্ষ কানায় কানায় আইনজীবী দিয়ে পূর্ণ। এ রকম হলে তো শুনানি করা যাবে না।
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মাননীয় আদালত, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আইনজীবীরা কেউ কোনো শব্দ করবেন না।
এসময় আদালত বলেন, দেখে মনে হচ্ছে প্রেশার তৈরির একটা চেষ্টা।
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, না, না। আইনজীবীরা কেউ কোনো আওয়াজ করবেন না।
এই পর্যায়ে আদালত বলেন, তাহলে আপনার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা কক্ষে থাকেন। বাকিরা বাইরে চলে যান।
তখন জয়নাল আবেদীন বলেন, এই জামিনে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল একাই শুনানির ক্ষমতা রাখেন। ওই পক্ষের আইনজীবীরা চলে যান।
আদালত তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনারা কক্ষ খালি করুন। আমরা ১০ মিনিট পর এজলাসে বসব।
একথা বলেই বিচারপতিরা এজলাসকক্ষ ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। আদালত কক্ষ থেকে জুনিয়ার আইনজীবীরা বেরিয়ে যান। আড়াইটায় ফের আদালত বসলে জামিনের শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, এখানে ব্যারিস্টার রফিক উল হক, মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা রয়েছেন।
এসময় খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবীদের নাম পড়ে আদালতকে শুনিয়ে তিনি বলেন, এ মামলায় শুরুতে শুনানি করবেন এজে মোহাম্মদ আলী।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে খালেদা জিয়া বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু এ আইনে তাকে সাজা দেয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, এমনকি তাকে এ আইনে অভিযুক্ত করা হয়নি। এখানে সংক্ষিপ্ত সাজা দেয়া হয়েছে। আদালতের রেওয়াজ আছে তিনি জামিন পেতে পারেন। এছাড়া তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ নারী।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আপিল বিভাগের দুটি নজির পেশ করেন।
একটি রায়ের নজির তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদক আইনে এক আসামিকে দুই বছর সাজা দেয়া হয়। আপিল বিভাগ সাজার রায় বহাল রাখেন। জামিন দেননি।
এসময় আদালত বলেন, এটা তো কোনো নজির হতে পারে না; এটা অপ্রাসঙ্গিক। এটার সাথে এ মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
পরে খুরশিদ আলম খান বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেন, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। এছাড়া তিনি যে অসুস্থ, সেটার স্বপক্ষে কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি।
জবাবে আদালত বলেন, উনারা মেডিকেল সার্টিফিকেট না দিলেও সার্টিফায়েড কপি দিয়েছেন। এতে সবকিছু রয়েছে। বরং আপনি এ বিষয় কোনো যুক্তি দিতে পারেন কিনা?
খুরশিদ আলম খান বলেন, মাই লর্ড যেকোনো মামলায় জামিন চাইতে হলে অসুস্থ বিবেচনা নিলে অবশ্যই মেডিকেল রিপোর্ট দিতে হবে।
এসময় তিনি অপর একটি নজির পেশ করে দুদকের আইনজীবী বলেন, ইয়াবা মামলায় আসামি আমিন হুদার মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়ার পরও জামিন দেয়া হয়নি। এভাবে অনেক নজির রয়েছে জামিন না দেয়ার।
খুরশিদ আলম বলেন, আমি মনে করি নিম্ন আদালতের নথি আসার পর জামিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া যায়।
এসময় আদালত বলেন, এ মামলায় তো আসামিকে দুদক আইনে অভিযুক্ত করা হয়নি। সাজাও দেয়া হয়নি। তাকে সাজা দেয়া হয়েছে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারায়?
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার ব্যাখ্যা অন্য পৃষ্ঠায় রয়েছে।
পাল্টা জবাবে আদালত বলেন, খালেদা জিয়াকে দুদক মামলায় অভিযুক্ত করা হয়নি। আপনারা সেটার বিষয়ে যুক্তিযুক্ত কোনো কিছু দিতে পারেননি। আপনাকে তো প্রথমে অভিযুক্ত করতে হবে?
আদালত আরো বলেন, দুটিতে তো অভিযুক্ত করে একটিতে সাজা দিতে হবে।
এসময় দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, উনি এ মামলায় আজ পর্যন্ত মোট ২০৫ দিন সাজা খেটেছেন। এসময় তার সাজা থেকে বাদ যাবে। এ সংক্ষিপ্ত সময় জেল খাটার পর নথি আসার আগে তাকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না।
জাবাবে আদালত বলেন, নথি আসার আগেও দিতে পারি আবার নথি আসার পরও দিতে পারি।
এরপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ইতিহাসে এ প্রথম কোনো মামলা; যেখানে এতিমের টাকা খোয়া গেছে। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের স্বাক্ষরে কীভাবে টাকা চলে যায়?
তিনি আরো বলেন, ওই সময় তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসায়ই থাকতেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এত বড় দায় এড়াতে পারেন না।
মাহবুবে আলম বলেন, টাকাটা এসেছে, খোয়া গেছে এবং পাঁচটি চেকে এসব টাকা উত্তোলন হয়েছে নথিতে সবই রয়েছে। এ মামলায় আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের মামলা। ২৩৭ কার্যদিবসে তিনি ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। এছাড়া ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। চার বার বিচারক পরিবর্তন হয়েছে।
মাহবুবে আলম বলেন, মোট কথা নয় বছরের মতো মামলাটি চলছে। সুতরাং এখানেও দেরি হবে না, তা বলা যায় না। তাই আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর মামলায় হয়েছিল। আমাদের কোর্টের সে প্রযুক্তি আছে।
এসময় আদালত বলেন, মামলা বাতিলের আবেদনটি দুই বছরে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে।
জবাবে অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও জনতা টাওয়ার মামলায় সাজা হয়েছে। পরে তিনি তিন বছরের বেশি জেল খেটেছেন। উনার সাত বছর সাজা হয়।
জবাবে আদালত বলেন, এসব কথা টিভিতে টক শোর বক্তব্য হতে পারে। মামলার কোনো যুক্তি আছে কিনা?
এসময় আর্টনি জেনারেল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের পত্রিকা কাটিং আদালতে পড়ে শুনিয়ে বলেন, যেখানে বলা হয়েছে, রায় প্রদানকারী বিচারককেও ছাড় দেয়া হবে না।
এসময় আদালত বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কথা বলব না। কেননা উকিলরা ও রাজনীতিবিদরা সবাই রায় পক্ষে গেলে বলে ঐতিহাসিক রায় আর বিপক্ষে গেলে বলে বিদ্বেষমূলক রায়। আর রাজনীতিবিদরা তো বলে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছুই নেই। সুতরাং রাজনীতি বিষয়ে আমরা কিছু বলব না।
এসময় মাহবুবে আলম বলেন, সবাই বলেন না। যেমন আমাদের মওদুদ আহমদ সাহেবও আছেন, জয়নুল আবেদীন সাহেবও রয়েছেন। তারা এসব কথা বলবেন না।
পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই বিচারপতি পরামর্শক্রমে আদেশ দিয়ে বলেন, জামিন আবেদনের শুনানি শেষ, নিম্ন আদালতের নথি আসার পর আদেশ।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি এ বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন উপস্থাপন করা হলে আদালত আপিল শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ করেন। একই সাথে নিম্ন আদালতে দেয়া খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন।
এছাড়া বিচারিক আদালতে দেয়া মামলার যাবতীয় নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
তবে দুদকের আপত্তির কারণে ওইদিন জামিন শুনানি না করে আজ রবিবার জামিন শুনানির জন্য ধার্য করেন আদালত।
২২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপিলের শুনানি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল গ্রহণের জন্য আবেদন জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রস্তুতির জন্য দুই ঘণ্টা সময় চাইলে বেঞ্চ দুপুর ১২টায় শুনানি শুরু করার আদেশ দেন।
দুপুরে শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী জামিনের নথি উপস্থাপন করে বক্তব্য দেন। এসময় খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন গ্রহণ এবং জরিমানা স্থগিতের আদেশ দেন আদালত।
পাশাপাশি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের নথি তলব করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব নথি হাইকোর্টে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পরে খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর শুনানি শুরু হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান মামলার নথি দেখে প্রস্তুতির জন্য আদালতে সময় আবেদন জানালে রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবির আদেশ দেন আদালত।
আদালত থেকে বেরিয়ে খুরশিদ আলম খান গণমাধ্যমের কাছে আদালতের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন।
দুদক সময়ের আবেদন করলে আদালত বলেন, সাত বছর পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তিকে এই আদালত জমিন দিতে পারেন। খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের জন্য সাজা পেয়েছেন। তাই তাকে আদালত জামিন দিতে পারেন। তারপর তিনি নারী ও বয়স্ক, তিনি জামিন পেতে পারেন।
আদালতকে খুরশীদ আলম বলেন, দুদক আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মামলার রায়ের সত্যায়িত কপি পেয়েছে। সেই কারণে আমরা তা দেখতে পারি নাই। কাগজপত্র দেখে এ ব্যাপারে শুনানি করতে হবে। সেই কারণে সময়ের প্রয়োজন।
এসময়ই আদালত সাত বছরের নিচে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে হাইকোর্ট তার জামিন দিতে পারেন বলে উল্লেখ করে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, এটা কি শুনানির প্রয়োজন আছে?
খুরশিদ আলম খান বলেন, কোনো মামলায় দুদককে পক্ষভুক্ত করা হলে দুদকের প্রভিশন অনুযায়ী তাকে সময় দিতে হয়। আমরা জামিনের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমি শুনানির জন্য সময় চাইছি।
আদালত বলেন, আপনাদের দাবি যুক্তিযুক্ত। এ জন্য আমরা রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখছি।
এরআগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনে বলা হয়, গত ৩০ বছর তার পায়ে গেটে বাত। ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস। ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ আর আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন। আছে দুই হাঁটু প্রতিস্থাপনের কারণে হওয়া প্রচ যন্ত্রণাও। তার বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
১৯৯৭ সালে তার বাঁ হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনের কারণে তার গিঁটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এমনকি হাঁটাহাঁটি না করতেও চিকিৎসকের পরামর্শ রয়েছে। এসব শারীরিক জটিলতার কারণ বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুরের আরজি জানানো হয়।
উপমহাদেশ ও দেশের উচ্চ আদালতের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা আবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, যখন আসামি একজন নারী হয়, তখন তার অনুকূলে জামিন বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদনকারীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হোক।
আর জামিন আবেদনকারী বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাছাড়া যে মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জিয়া অরফনেজ ট্রাস্ট্র দুর্নীতি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পক্ষে আপিল আবেদন দায়ের করেন তার আইনজীবীরা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
৬৩২ পৃষ্ঠা রায়ের দিন পড়া হলেও ১১ দিন পর এক হাজার ১৭৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়।
এরপর রায়ের অনুলিপি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সেটা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এজে মোহাম্মদ আলীর চেম্বারে নিয়ে আসেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূঁইয়া
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। এ মামলায় অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এ মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন