নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের নিহত কেবিন ক্রু নাবিলার দুই বছরের শিশুকন্যা ইনাইয়া ইসলাম হিয়াকে তার খালা নিয়ে গেছেন। শিশুটিকে উদ্ধারে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, হিয়াকে একেকবার এক এক জায়গায় সরানো হচ্ছে। তাই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে একটু সময় লাগছে।
হিয়ার মা আর বাবার পরিবারের টানাপোড়েনের কারণে শিশুটিকে রহস্যজনকভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও ধারণা করছে পুলিশ।
এদিকে হিয়া তার খালার কাছে আছে জানার পর থেকে তার দাদি বাড়ির লোকজন বার বার মোবাইল ফোনে হিয়ার নানি বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের সব মোবাইল বন্ধ রয়েছে।
নাবিলার চাচা বেলাল হোসেন বাবলু সকালে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রীদের স্বজনদের সঙ্গে নেপালে গেছেন। তার অবর্তমানে পরিবারের দেখাশোনা ও হিয়াকে উদ্ধারে পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বন্ধু বিপ্লব রায়হানকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তিনি।
বেলালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বিপ্লবের কাছেই রয়েছে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সকালের ফ্লাইটে বেলাল নেপালে গেছে। তার মোবাইলটি আমার কাছে। পরিবারের কেউই এখন কথা বলার অবস্থায় নেই। তাই আমিই সবার সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমার সাথে এই পরিবারের সম্পর্ক বহুদিনের। এক হিসেবে আমিও এই পরিবারেরই অংশ।
বেলাল বলেন, নাবিলার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর হিয়াকে আনতে ওর বাসায় গিয়ে বেলালরা দেখতে পায় বাসা তালাবদ্ধ। নাবিলার স্বামী প্রবাসী। ডিউটি করার সময় নাবিলা হিয়াকে বুয়া রুনার কাছে রেখে যেত।
পরে গতকাল (সোমবার) রাতেই হিয়ার দাদি বিবি হাজেরা উত্তরার পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি ৯০২) দায়ের করেন। সকালে জানতে পারি ওই বুয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
‘বুয়া জানিয়েছে, তিনি হিয়াকে তার খালার কাছে দিয়ে এসেছেন। এরপর থেকেই আমরা যোগাযোগের জন্য নাবিলার মায়ের বাড়ির সব নাম্বারে চেষ্টা করছি, কিন্তু সব’টি মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে’ যোগ করেন বেলাল।
নিহত নাবিলার চাচাতো বোনের স্বামী সালাইউদ্দিন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমরা শুনেছি নাবিলার মেয়ে তার নানির বাড়িতে আছে। কিন্তু বিষয়টি ওই বাড়ি থেকে আমাদের না জানালে তো আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।
উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ওই গৃহকর্মীকে আটক করি। সে জানায় হিয়াকে নাবিলার বোন নিয়ে গেছে। শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
তিনি জানান, শিশুটির নানার বাড়ি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শিশুটি উদ্ধার হওয়ার পর গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
কী কারণে হিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে ওসি আলী হোসেন বলেন, মায়ের অনুপস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণেও হতে পারে। আবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঝামেলাও থাকতে পারে। তবে মনে হচ্ছে বিষয়টি একটু জটিল। এখানে দুই পরিবারের টানাপোড়ন রয়েছে বলেই ধারণা করছি। বাকিটা শিশু উদ্ধারের পরই বলা যাবে।
উল্লেখ্য, সোমবার ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে চার ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এরমধ্যে কমপক্ষে ৫০ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২ জন।
নিহতদের মধ্যে বিমানের ক্রু নাবিলা রয়েছেন। মেয়েকে বুয়ার কাছে রেখে ফ্লাইটে উঠে নাবিলা। আদর করে নাবিলা মেয়েকে ডাকতেন ইয়া পাখি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন