নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের নিহত কেবিন ক্রু নাবিলা ফারহিনের আড়াই বছরের শিশুকন্যা ইনাইয়া ইমাম হিয়াকে নিয়ে চলছে দুই পরিবারের টানাটানি। পুলিশ হেফাজতে থাকা হিয়া কোন পক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকবে তা নিয়ে সমঝোতায় আসতে পারেনি তার নানা ও দাদার পক্ষ।
সোমবার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের পরপরই শিশুটির অবস্থান নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। দুই পরিবারের টানাপোড়েনের কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাবিলার স্বামী প্রবাসী। ডিউটি করার সময় নাবিলা হিয়াকে বুয়া রুনার কাছে রেখে যেত। আদর করে নাবিলা মেয়েকে ডাকতেন ‘ইয়া পাখি’।
নাবিলার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর হিয়াকে আনতে বাসায় গিয়ে হিয়ার দাদা বাড়ির লোকজন দেখতে পায় বাসা তালাবদ্ধ। পরে রাতেই হিয়ার দাদি বিবি হাজেরা উত্তরার পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি ৯০২) দায়ের করেন। বুয়াকে আটক করে পুলিশ। বুয়া জানান, তিনি হিয়াকে তার খালার কাছে দিয়ে এসেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে হিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির উত্তরা থানা। বয়স কম হওয়ায় হিয়া কাদের কাছে থাকবে তা মীমাংসা করে নিতে দুই পরিবারকে বলেছে পুলিশ। রাত ৯টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দু’পক্ষ কোনো সমেঝোতায় পৌঁছতে পারেনি।
ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার নাভিদ কামাল শৈবাল সন্ধ্যায় বলেন, যেহেতু মা-বাবা অনুপস্থিত, আমরা আশা করছি হিয়ার দাদি-নানি নিজেদের মধ্যে একটা মীমাংসায় আসবেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। শিশুটি কার কাছে থাকবে- এই সিদ্ধান্ত আমাদের জানালে থানা থেকেই হিয়াকে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, যদি তারা মীমাংসা করতে না পারেন তাহলে আমরা শিশুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠাব। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখন দাদি অথবা নানি হিয়ার দায়িত্ব পাবেন।
রাত ৯টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তারা দু’পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। তবে হিয়া কার কাছে থাকবে এনিয়ে তারা তখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
ইনায়া ইমাম হিয়ার দাদি বিবি হাজেরা জানান, হিয়া ছোটবেলা থেকে আমাদের কাছে আছে। এখন হঠাৎ করে দাবি করলেই তো দিয়ে দেব না।
অন্যদিকে হিয়ার নানি মিনা জামান বলেন, ‘আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল- কখনো যদি ওর কিছু হয়ে যায়, তাহলে হিয়া যেন আমার কাছে থাকে।’
উল্লেখ্য, সোমবার ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে চার ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এরমধ্যে কমপক্ষে ৫০ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিমানের কেবিন ক্রু নাবিলা রয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন