নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর নানা কারণের কথা বলা হচ্ছে। তদন্ত চলায় পরিষ্কার করে কিছু বলাও সম্ভব হচ্ছে না। ওদিকে ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ডও পরিষ্কার করবে অনেক কিছু। তার পরও সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কয়েকটি ব্যাপারকে-
বৈরী আবহাওয়া
বিশ্লেষকরা বলছেন, আবহাওয়া একদম বৈরী না হলেও ফ্লাই করার জন্য শতভাগ অনুক‚লে ছিল না। আকাশ ছিল কিছুটা ঘোলাটে, ফ্যাকাশে। এ কারণে রানওয়ে পরিষ্কারভাবে নোটিস করতে সমস্যা হওয়ার কথা। দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ হতে পারে।
ভুল নির্দেশনা
ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে একেক সময় একেক রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমন ভুল নির্দেশনার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে। কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা এর উপরেই জোর দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
পাইলটের মানসিক ফিটনেস
ফ্লাই করার আগে গত রোববার রাতে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন পাইলট। তার পরও তাকে জোর করে ডিউটিতে পাঠানোর গুঞ্জন রয়েছে। ফলে তিনি ছিলেন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। পাইলটের মানসিক স্বাস্থ্যও একটি কারণ হতে পারে।
পুরনো এয়ারক্রাফট
জানা যায়, এয়ারক্রাফটটি ১৭ বছরের পুরনো। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এর ফিটনেস নিয়ে। এটিও কারণ হতে পারে।
ভালো ইংরেজি না জানা
নেপালিরা ভালো ইংরেজি জানেন না। তাই পাইলটের সঙ্গে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের কমিউনিকেশনটা অনেক সময় মিস কমিউনিকেশন-এ পরিণত হয়। এক্সিডেন্টের কারণ হিসেবে এটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বিমানবন্দরের অবস্থান
চারিদিকে পাহাড়ঘেরা এবং উপত্যকার মধ্যে অবস্থানের কারণে বিমানবন্দরটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। বিমান পাহাড়ের সঙ্গে লেগে যেতে পারে, অনেক সময় এমন একটি ভয়ও থাকে পাইলটের মনে। এতে পাইলটের কনসেনট্রেশন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটাও সম্ভব্য কারণ।
যান্ত্রিক ত্রুটি
যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়েও অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এয়ারক্রাফটটি পুরনো বলে এ সম্ভাবনাকেও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মূল কারণ ‘মিস কমিউনিকেশন’
এমএ মোমেন, সাবেক এমডি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর আগে থেকেই দুর্ঘটনাপ্রবণ। কারণটা হলো, এটার অবস্থান একটা উপত্যকার মধ্যে, যার চারদিক পাহাড়ে ঘেরা। এমন অবস্থানের কারণে যদি কখনো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও পাইলটের মধ্যে কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়, তাহলেই দুর্ঘটনার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়ে থাকে।
এ এয়ারপোর্টে ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে, বড় দুর্ঘটনা তো ঘটে মাঝে-মধ্যে। ১৯৯২ সালেই দুটি বড় দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল। একটি থাই এয়ারলাইনস অন্যটি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ)। কিন্তু এত দুর্ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
আরেকটা বিষয় হলো, নেপালিরা ভালো ইংরেজি জানেন না। যার কারণে অন্য দেশের পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগটা অনেক সময় স্বচ্ছ হয় না। দুর্ঘটনাগুলোর কারণ হিসেবে এ ব্যাপারটাকে একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (আইসিএএ) পক্ষ থেকেও এমন অভিযোগ এসেছে।
এ এক্সিডেন্টের ব্যাপারে বলি। ইউটিউবে একটা অডিও ভাসছে, যেটা শুনে মনে হয়, ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বলা হচ্ছে রানওয়ের একটা দিক ব্যবহারের জন্য কিন্তু পাইলট চাইছেন অন্য দিকটি ব্যবহার করতে। হয়তো পাইলট সাজেস্ট করা দিকটি ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন না। কথাগুলো খুব স্পষ্টও না। অনুমান করা যেতে পারে, এখানে একটা মিস কমিউনিকেশন ঘটেছে, যেটা দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ।
অনেকে এয়ারক্রাফটের দিকে আঙুল তুলছেন, বলছেন, এটি ছিল ১৭ বছরের পুরনো, তাই এক্সিডেন্ট করেছে। আমার মনে হয়, এটা কোনো কারণ নয়। আমি যখন বাংলাদেশ বিমানের দায়িত্বে ছিলাম তখন ২৮ বছরের পুরনো এয়ারক্রাফটও ব্যবহার করেছি। রক্ষণাবেক্ষণ যদি ভালো হয়, তাহলে এটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ হিসেবে ইঞ্জিনের ব্যাপারটা বলছেন অনেকে, এ সম্ভাবনাটা খুব ক্ষীণ। কারণ হিসেবে যদি প্রবল সম্ভাবনার কথা বলতে হয়, তাহলে সেটা হলো ‘মিস কমিউনিকেশন’।
ব্ল্যাক বক্সটা উদ্ধার করা গেছে, এটা একটা বড় ব্যাপার। এর মধ্যে দুটি ব্যাপার থাকে। ফ্লাইট ডাটা রেকর্ড (এফডিআর) এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ড (সিভিআর)। প্রকৃত ঘটনাটা এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি।
যে কথাটি না বললেই নয়, বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশের কোনো এয়ারলাইনসের দুর্ঘটনার ঘটনা নেই বললেই চলে। এর আগে ১৯৮৪ সালে একটি ঘটনা ঘটেছিল। তাই হঠাৎ করে এমন বড় একটা দুর্ঘটনার ইমপ্যাক্টও হতে পারে অনেক বড়। আমাদের প্রাইভেট এয়ারলাইনস এমনিতেই দাঁড়াতে পারছে না। এর মধ্যেই এমন ঘটনা এ ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা বড়সড় আঘাত। যত দ্রুত এর প্রকৃত কারণ উদ্ধার করে যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে পারব, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
খোলাকাগজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন