পুলিশ রিমান্ডে বর্বর নির্যাতনের পর কারাগারে মৃত্যু হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে জাকিরের পরিবারকে ফোন করেন তারেক রহমান। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের শান্তনা দেন। এ সময় জাকিরের শোকাহত পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাকিরের ছোট নিস্পাপ কন্যা রাজকুমারী ডুকরে কাঁদতে থাকে।
বাকপ্রতিবন্ধী বড় মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তাদের বাসায় কান্নার রোল পড়ে যায়। এসময় এক হ্নদয়বিদারক পরিবেশের সৃস্টি হয়। তারেক রহমান সবাইকে শান্তনা দিয়ে বলেন, এভাবেই স্বৈরাচারী সরকার অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছে। অসংখ্য শিশুকে এতিম করেছে। অনেক স্ত্রীকে বিধবা করেছে। এই দুঃশাসনের অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ। জাকিরের পরিবার কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, স্বাভাবিক সম্পুর্ন সুস্থ-সবল টগবগে জাকির হোসেন মিলন গত ৬ মার্চ প্রেসকাবের সামনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে যান। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে মিলনকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল শাহবাগ থানা, কিন্তু ডিবি আদালতের অনুমতি ছাড়াই পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে তার ওপর ভয়ংকর বর্বরতা চালায়। তার হাত ও পায়ের ২০ টি নখ তুলে ফেলে। ইলেক্ট্রিক শক দেয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলিয়ে পৈশাচিক নিপিড়ন চালায়।
অবর্ণনীয় নির্যাতনের পর মূমুর্ষ অবস্থায় জাকির হোসেন মিলনকে কারাগারে পাঠানোর পর কারাগারেই মৃত্যু হয় জাকির হোসেন মিলনের। তারেক রহমান ছাত্রদল নেতা জাকিরের শোকাহত পরিবারকে শান্তনা দিয়ে বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা এভাবে খুন গুমের শিকার হচ্ছেন, দল তাদের পরিবারের পাশে থাকবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসেও তাদের নাম বীর হিসেবেই উচ্চারিত হবে। জাকিরের মা বুক চাপড়িয়ে আহাজারি করে বলতে থাকেন,’আমার চোখের মনি মিলন নিস্পাপ। কোন অন্যায় করেনি। শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল। আমার বুকের মানিককে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। জাকিরের পরিবাবারের সদস্যরা বলতে থাকে, শেখ হাসিনা শত শত মায়ের বুক খালি করেছে,আল্লাহ ও তার বুক খালি করবেন। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। তারেক রহমান তাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেন।
তারেক রহমান বলেন, মজলুমের কান্না বৃথা যায়না। জুলুম, অবিচার, অনাচার করে কেউ বেশিদিন টিকতে পারেনি, এই স্বৈরশাকরাও টিকবেনা। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিটি গুম খুন অন্যায়ের বিচার হবে। প্রসঙ্গত যে,৬ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনম ছিলেন জাকির হোসেন মিলন। পুলিশী নির্যাতনে দুই বছর আগে মিলন ঢাকার তেজগাঁও এর বাসা ছেড়ে পরিবারের সবাইকে গাজীপুরে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। তার ছোট্ট মেয়েটির বয়স দুই বছর। বাবার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠছে। বাবাকে ডাকছে। বড় মেয়েটি বাক ও শ্রুতি প্রতিবন্ধী। তার চোখদুটি আজ অপলক দৃষ্টি ঘরের দেওয়ালে টানানো বাবার ছবির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন