বরিশালে ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপারসন সুমন হাসানকে মারধরের প্রতিবাদে উত্তাল বরিশাল নগরী। ডিবির হাতে আহত সাংবাদিক সুমন হাসানের সারা শরীর ফুলে উঠেছে।
এ ঘটনায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংবাদকর্মীরা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মনুষ অংশ নেন।
নির্যাতনের শিকার ডিবিসির ক্যামেরাপারসন সুমন হাসানকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুমন হাসানের স্বজনরা জানান, সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে তার। আঘাতের কারণে সারা শরীর ফুলে উঠেছে। ব্যথায় কাতরাচ্ছেন সুমন হাসান।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন, আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত লোক দেখানো। তাদের ফৌজদারি আইনে মামলা রুজু করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি পালিত হয়।
ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি দিপু তালুকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বরিশাল প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্বা নুরুল আলম ফরিদ, সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ, বরিশাল টেলিভিশন মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হুমাউন কবীর, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি বিধান সরকার, নিউজ২৪ চ্যানেলের প্রতিনিধি রাহাত খান ও সাংবাদিক সৈয়দ মেহেদী হাসান প্রমুখ।
এ সময় সাংবাদিকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিবিসির ক্যামেরাপারসন সুমন হাসান অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এক নিকটাত্মীয়কে গোয়েন্দা পুলিশে আটকের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি জানতে চান।
এ সময় যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তার ওপর চড়াও হয় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
এ সময় প্রকাশ্যে তার পরনে থাকা টিশার্ট টেনেহিঁচড়ে এবং পেটাতে পেটাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পথিমধ্যে তার অন্ডকোষ চেপে ধরাসহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা নগরীর পলিটেকনিক রোডে নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যান। সেখানে নির্যাতিত সাংবাদিক সুমনকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কাঁদতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাংবাদিকরা।
এ সময় সাংবাদিক সুমনকে নির্যাতনকারী প্রধান অভিযুক্ত কনস্টেবল মাসুদ একজন সাংবাদিককে লাথি দেয়। এতে সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান সাংবাদিকদের শান্ত করে তার অফিস কক্ষে নিয়ে যান।
সেখানে সব সাংবাদিকের দাবির প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক নগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই দলে থাকা ৮ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহারসহ (ক্লোজড) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার গোলাম রউফ খান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন