সুস্থ হয়ে নিজ ক্যাম্পাসে ফিরেই আশার কথা শোনালেন জনপ্রিয় লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এসময় হামলায় জড়িতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি নাস্তিক নই, পুরো কোরআন মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। বুধবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ছাত্রীদের সাইকেল বহরের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে পৌঁছান তিনি। ঠিক ১১ দিন আগে এ মঞ্চেই তার উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল নামে স্থানীয় এক যুবক।
শাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ‘সাধাসিধে কথা জাফর স্যার ও আমরা শীর্ষক’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ড. জাফর ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘আমি বেঁচে গিয়েছি। আমার বার বার হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ, দীপনসহ সকলের কথা মনে পড়েছে। সবার পরিবারের কথা স্মরণ করেছি।’
জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, ‘আমার উপর হামলার পর প্রথম চিন্তা হলো- আমার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিনা। আমি স্মৃতি পরীক্ষা করলাম গাড়িতে বসে। হাসপাতালে নেয়ার পর আমার ব্রেন ঠিক আছে নিশ্চিত হলাম।’
তিনি বলেন, হাসপাতালে দেখি ওটিতে (অপরারেশ থিয়েটার) ডাক্তার আর নার্সদের চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশি। পুলিশ সাধারণ মানুষদের বের করার চেষ্টা করার ফাঁকেও ডাক্তাররা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন বলে ধন্যবাদ জানাই।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, হাসপাতালে প্রথম থেকেই বলেছি- আমাকে ক্যাম্পাসে যেতে হবে। ফিরলাম একটা কারণে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে শিক্ষকদদের উপর হাত তুলে ছাত্ররা। তারপর আমরা নিজেদের গুটিয়ে নিই।
তিনি বলেন, এঘটনার পর টের পেলাম গুটিয়ে নেয়া উচিত হয়নি। এখন থেকে আবারো আমি তোমাদের সাথে আছি। নাটক, গান আবিষ্কারের জন্য ডাকলে আমরা আসব। আর গুটিয়ে থাকব না।
জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, হামলাকারী বেহেশতে যাওয়ার জন্য আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। পৃথিবীর কোনো সুখ তার নেই, তাই তার জন্য করুণা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি নাস্তিক নই। আমি পুরো কোরআন শরীফ খুবই মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। কোরআনে আছে- একটা মানুষ হত্যা করলে পুরো মানবজাতি হত্যার সমান।’
ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘এ ধরনের কেউ থাকলে বাসায় অস্ত্র রেখে আমার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আসো। আমি জানতে চাই- কোন বিভ্রান্তি তোমাকে ঘিরে রেখেছে?’
এসময় ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, এর আগে যাদের উপর হামলা হয়েছে, তাদের অনেককে ফিরে পাওয়া যায়নি। হামলার পর আমি কাঁদিনি। শাবি আমাদের শক্ত করে দিয়েছে। এ হামলার পর ছাত্র শিক্ষকসহ দেশের মানুষ হাউমাউ করে কেঁদেছেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, হাসপাতালে থেকে জাফর ইকবাল বলেছেন- আমার ছাত্ররা আমার কণ্ঠ শুনুক। তাই সুস্থ হয়ে মুক্তমঞ্চে ফিরেছেন।
শাবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, শাবির প্রতিটি ধূলিকণায় সস্ত্রীক ড. জাফর ইকবালের ছোঁয়া আছে। জাফর ইকবাল শাবির ‘ব্রান্ড নেম’। সারাদেশে তরুণ প্রজন্ম জাফর ইকবালের দিকে চেয়ে থাকেন। জাফর ইকবালের বিকল্প শুধু জাফর ইকবাল।
শাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উসকানিতে জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে, তা আবিভূত করেছে আমাদের।
প্রিয় শিক্ষককে কাছে পেয়ে আপ্লুত শিক্ষার্থী শাহজাদি মৌরিন বলেন, জাফর ইকবাল আমাদের প্রেরণা। তিনি আমাদের স্বপ্নের কারিগর। তার উপর এমন হামলা কাম্য নয়।
মিথুন নাহার নামের এক ছাত্রী তার বক্তব্যে বলেন, স্যারের হাসিমুখ আমাদের শিখিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই। স্যারের প্রতিটি বইয়ে একেকটা চরিত্র থাকে। ওই চরিত্র সকল অপশক্তি রুখে দেয়। এমনই শত শত অনুসারী আজ জন্মেছে বাস্তবে। আমরা সব অপশক্তি রুখে দেব।
এর আগে দীর্ঘ ১১ দিন চিকিৎসা শেষে বুধবার বেলা ১২টা ৪৬ মিনিটে বেসরকারি একটি বিমানে করে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ড. জাফর ইকবাল। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে তাকে প্রিয় ক্যাম্পাসে নেয়া হয়।
এদিকে ড. জাফর ইকবালের নিরাপত্তা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার অফিস, বাসা এমনকি তিনি যেখানে যাবেন পুলিশ তার সঙ্গে থাকবে।
গত ৩ মার্চ শাবির মুক্তমঞ্চে হামলার শিকার হন জনপ্রিয় লেখক ড. জাফর ইকবাল। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাতেই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন