আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে শটগান ৫০ হাজার এবং কার্তুজ ৫০ লাখ । পুরনো ‘পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেলের’ পরিবর্তে নতুন এ অস্ত্র তুলে দেয়া হবে ছয় লাখ আনসার বাহিনীর হাতে। তবে তার আগে বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এদিকে অস্ত্র কেনার প্রস্তাবটি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বাজেট থেকেই বিপুল অঙ্কের এ অর্থ ছাড় করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আসা অস্ত্র কেনার প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তা থাকলে বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের
কথা রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আর নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও
বসে নেই। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি এ নিয়ে মাঠে কাজ করছে। নির্বাচন ঘিরে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো ও প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর ধারাবাহিকতায় বিপুল অঙ্কের অস্ত্র কেনার প্রস্তাব উঠেছে।
সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার প্রস্তাব পাঠিয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। এতে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ছয় লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। নিরাপত্তা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত পিসি এবং এপিসিকে একটি করে মোট দুটি অস্ত্র দেয়া প্রয়োজন। সে হিসেবে নির্বাচনকালীন ৮০ হাজার অস্ত্রের দরকার হবে। কিন্তু বাহিনীতে বর্তমান ৩০ হাজার অস্ত্র রয়েছে। তাই বাকি ৫০ হাজার শটগান দরকার। পাশাপাশি প্রতি অস্ত্রের বিপরীতে ১০০টি করে মোট ৫০ লাখ পিস কার্তুজ প্রয়োজন হবে। আর এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে প্রয়োজন হবে ৩৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জননিরাপত্তা বিভাগ ও আনসার বিভাগের সঙ্গে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে সংশোধিত বাজেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আনসার ও ভিডিপি অধিদফতরের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ৫১৫ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেট চাওয়া হয়। চলতি অর্থবছর শেষ হতে অবশিষ্ট পাঁচ মাসের মধ্যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্ধতি জানতে চায় অর্থ বিভাগ। বৈঠকে আনসার ও ভিডিপি অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ডিসেম্বরে। ফলে অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি চলতি অর্থবছরে শেষ করতে হবে। কারণ এর সঙ্গে অস্ত্র গ্রহণ, বিতরণ ও প্রশিক্ষণের বিষয়টি জড়িত। এ বছর না কিনে আগামী অর্থবছরে কেনা হলে নির্বাচনের চাহিদা পূরণ করা সক্ষম নাও হতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকার টু সরকার (জিটুজি) প্রক্রিয়ায় দ্রুত অস্ত্র কেনা দরকার। এ ধরনের আলোচনার পর অর্থ বিভাগের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয় বৈঠক থেকে।
সূত্র মতে, অর্থ বিভাগের এ নির্দেশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি অর্থ সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ খাতে ৩৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র কেনার টাকা দেয়া হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে সমুদয় অস্ত্র কেনা শেষ করা যাবে কিনা সে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও অর্থ বিভাগ থেকে এই শর্ত জুড়ে দেয়া হবে যে, অস্ত্র যেন জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে আসে।
জানা গেছে, একমাত্র আনসার ও ভিডিপি বাহিনী পুরনো পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল ব্যবহার করছে। তাই এ অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে শটগান দেয়া হবে। এ জন্য বাহিনীতে শটগান বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও ফায়ারিংয়ের মাধ্যমে অস্ত্র চালানোর দক্ষতা গড়ে তোলা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন