হালকা পাতলা গড়নের ছয় ফুট উচ্চতার মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকত। কিন্তু সেই হাসি আজ মলিন হয়ে গেছে। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, শরীরে বড় একটা অসুখ নিয়ে দিব্যি চলাফেরা করছেন।
তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গোবরচাপা হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক। দুটি কিনডি নষ্ট হয়ে গেছে। কিনডি রোগে আক্রান্ত হয়ে সহায় সম্বল বিক্রি করে আজ তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে হঠাৎ করেই পেটের বাম দিকে ব্যথা শুরু হয়। এরপর জয়পুরহাট জেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। সেখানে পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ে। এরপর বগুড়ায় ডা. পাভেলের কাছে তিনমাস চিকিৎসা নেয়া হয়। তাতে কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর আবার ঢাকায় কিনডি ফাউন্ডেশনে দেখানো হয়। সেখানে দুটো কিনডি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানানো হয়।
এরপর ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ভারতের ভালরে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজে দেখানো হয়। সেখান থেকে বলা হয় কিনডি পরিবর্তন অথবা যতদিন বাঁচবে ততদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হবে।
এরপর আবারও ঢাকায় চিকিৎসা শুরু হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডায়ালাইসিস শুরু করেন। সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতিবার ২ হাজার ৩৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খরচও আছে। ঢাকাতে চারবার ডায়ালাইসিস করা হয়।
এরপর নওগাঁ সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস শুরু করেন। প্রথমে ২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হলেও পরবর্তীতে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে খরচ হয়। দিন যতোই যাচ্ছে দুশ্চিন্তা ততোই বেড়েই চলছে। সামান্য বেতনের চাকরির টাকায় চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে একমাত্র ছেলে আরাফাত হোসেনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে পেড়েছে। কষ্ট করে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করলেও বিএসসি আর করা হয়নি। পরিবারের দৈন্যদশা দেখে বাবাকে সহযোগিতা করতে পাঁচমাস আগে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের গৃহিণী স্ত্রী আঞ্জুমান আরা দুই বছর থেকে মেরুদণ্ড ভেঙে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন।
পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি থেকে চিকিৎসার যোগান দিতে ৪০ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। চিকিৎসা খরচ কমাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে একটি দরখাস্ত করেন তিনি। গত ০৪ মার্চ থেকে দরখাস্তটি ছয়মাসের জন্য কার্যকর হয়েছে। এতে ডায়ালাইসিসে খরচ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা করে। এ পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর কিডটি প্রতিস্থাপন করতে খরচ পড়বে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি।
জ্ঞানের আলো জ্বালানোর মশাল আজ নিজেই নিভু নিভু করছে। নিরবে বোবা কান্না কেঁদে যাচ্ছেন। স্কুলে নিয়মিত হতে চান তিনি। সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সহযোগিতা করতে যোগাযোগ করতে শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। মোবাইল : ০১৭২৮- ৫৮৬৬৩১-০ (ডাচ বাংলা রকেট)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন