ঘড়ির কাঁটায় শনিবার (১৭ মার্চ) রাত ১০টা। কোনো রকম রাখঢাক নেই, একেবারে প্রকাশ্যে খুলনার ব্যস্ততম সাত রাস্তার মোড়ের বটতলায় বসে পলিথিন মুখে ধরে শ্বাস নিচ্ছে কয়েক শিশু। কৌতুহলী পথচারীরা ওদের ঘিরে রেখেছে।
এরপর একে একে অনেক মানুষের জটলা তৈরি হয়। শিশুগুলো কি করছে তাই দেখার আগ্রহ সবার। লোকজনকে ঘিরে দাঁড়াতে দেখে শিশুগুলো হাত থেকে জুতায় লাগানো আঠার (ড্যান্ডি) কৌটা কৌশলে পাশে ফেলে দেয়। নাম জানতে চাইলে প্রথমে বলতে চায় না। কি করছো জানতে চাইলে উত্তরও দেয় না। বরং পথচারীদের ওপর ক্ষেপে ওঠে।
একপর্যায়ে পথচারীরা ধমক দিলে শিশুরা জানায় তাদের নাম রফিক, রবিউল ও সোহেল। এ সময় ওদের সঙ্গে থাকা আরও দুই-তিনজন পালিয়ে যায়। এসব পথশিশুদের সবারই বয়স দশের কোটায়। বসবাস করে সাত রাস্তার মোড়, রেল স্টেশনসহ মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তায়।
ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত থাকায় শিশু তিনটির চোখ লাল। বকা খেয়ে নিজেরাই ফেলে দেয় আঠার কৌটা। কীভাবে নেশা হয় জানতে চাইলে একজন জানায়, পলিথিন ব্যাগে আঠা ঢেলে দেওয়ার পর ফুঁ দিয়ে পলিথিন ফুলিয়ে এর ভেতরে নাক মুখ ঢুকিয়ে কয়েকবার শ্বাস নিলে মাথায় ঝিমুনি ধরে নেশা হয়। সামান্য টাকায় এ নেশা করা যায়। ড্যান্ডি খেলে ক্ষুধা লাগে না। মনে কোনো দুঃখ থাকে না।
শিশু তিনটির পকেট চেক করে ব্লেড পাওয়া যায়। একজনের হাতে কয়েকটি ব্লেডে কাটার চিহ্নও রয়েছে।
কেন মাদক সেবন করছো এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলে, এ নেশা করলে ক্ষুধা কম লাগে তাই করি। ভিক্ষা করে এ নেশার টাকা জোগাড় করি।
ড্যান্ডি কোথায় পাওয়া যায় জানতে চাইলে সোহেল জানায়, বড় বাজারের অনেক দোকানে আছে। দোকানে গিয়ে জুতায় লাগানো আঠা চাইলেই দিয়ে দেয়।
বাসা কিংবা মা-বাবা কোথায় জানতে চাইলে একজন বলে, মা-বাবা আছে কিন্তু কোনো বাসা নেই। সবাই ফুটপাতে থাকে।
এখানে বসে নেশা করলে পুলিশে দেওয়া হবে বলে পথচারী ও বাস কাউন্টারের কর্মচারীরা হুঁশিয়ারি দিলে পথশিশুগুলো হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোগে কোপাবো, খুন করবো।’ ওদের এ আচরণে কিছুক্ষণ স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থেকে একে একে সবাই চলে যান।সাত রাস্তার মোড়ের একটি বাস কাউন্টারের কর্মচারী জানান, প্রায় প্রতিদিনই ওরা নেশা করে। কখনও গভীর রাতে আসে, কখনও সন্ধ্যায়। ভিক্ষা ছাড়াও কাগজ, পলিথিন, পানির বোতল ইত্যাদি সংগ্রহ করে ওরা ভাংড়ি ব্যবসায়ীদের দেয়। ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু টাকা পেলে তা দিয়ে আঠা কিনে মরণ নেশা সেবন করে।
তিনি আরও জানান, অনেক সময় নেশার টাকা না পেয়ে এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশু।ব্যস্ততম বাস কাউন্ডারের এ স্থানটিতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের টহল থাকলেও এদের ধরে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখনই মোবাইল টিমকে জানাচ্ছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন