ছয় মাস আগে কাবিনের পর গত বৃহস্পতিবার ছিলো শিক্ষার্থী ঝর্ণার (ছন্মনাম) বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান।
কিন্তু পুলিশের কাছে একটি মাধ্যমে খবর আসে ঝর্ণার বাল্য বিয়ে হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই ছাত্রীর বাবাকে বিয়ে বাড়ি থেকে তুনে আনে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।
২০ বছর বয়সী ওই ছাত্রীর পরিবার থেকে এক পর্যায়ে ২০ হাজার টাকার উৎকোচ নিয়ে ঝর্ণার বাবাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের মাদারীপুরের কালকিনির খাসেরহাট তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিকটিম পরিবারে এ বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। তবে, পুলিশের টাকা চাওয়ার কথোপকথনের অডিও রেকর্ডে রয়েছে এমন তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৬ মাস আগে কাবিন করে ঝর্ণার (ছন্মনাম) বিয়ের হয়। গত বৃহস্পতিবার ছিলো তার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান। আসময় খাসেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. রাজিবুল ফোর্স নিয়ে মেয়েটির বাবাকে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আটক করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
এরপর বাল্য বিয়ে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে মেয়েটির বাবার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দিলে ক্ষিপ্ত হয় পুলিশের এএসআই রাজিবুল। পরে ২০ হাজার টাকা উৎকোচের বিনিময়ে মেয়েটির বাবাকে বিকেলে ছাড়া হয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মেয়েটির বাবাকে আটকের পর রাজিবুল প্রথমে ওই তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (আইসি) মহিদুল ইসলামের কথা বলে টাকা দাবি করেন।
এমন একটি অডিও রেকর্ড পরিবর্তন ডটকমের হাতে এসেছে। অডিওতে শোনা যায়, রাজিবুল টাকা দাবি করে মোবাইলে মেয়েটির এক আত্মীয়কে বলেন, ‘না না ১০ হাজারে হবেনা। ওটার ডাবল করতে হবে। এর সাথে অনেকেই জড়িত রয়েছে। আমার আইসি স্যার (মহিদুল ইসলাম) ১০ হাজারে মানবে না। আর একটা বিষয়, এই বিয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। যদি ২০ হাজার টাকা দেন তাইলে মিটমাট হতে পারে।’
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীর নামে জন্ম নিবদ্ধন ইস্যু করা হয়। সেখানে ১ মে ১৯৯৮ সালে মেয়েটির জন্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে।
বিধি মোতাবেক ১ মে ২০১৬ সালে তার বিয়ের বয়স অর্থাৎ ১৮ বছর হয়েছে।
ওই ছাত্রীর এক নিকটাত্মীয় পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘অনেকদিন আগে মেয়েটির বিধি মোতাবেক বিয়ের কাবিন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিলো বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান। সেখান থেকে মেয়েটির বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাল্যবিয়ের মিথ্যা অভিযোগ তুলে টাকা আদায় করে।’
তিনি বলেন, ‘মেয়ের পরিবার মানসম্মান ও পুলিশের ভয়ে কারো কাছে মুখ খুলছে না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই রাজিবুল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমি মেয়েটির বাবাকে নিয়ে আসি পুলিশ ফাঁড়িতে। এরপর কি হয়েছে সেটা আমি জানি না। তবে, পরের বিষয় আইসি মহিদুল স্যার জানেন।’
এ ব্যাপারে খাসেরহাট তদন্ত কেন্দ্রের আইসি (পরিদর্শক) মহিদুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা মেয়েটির বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম। পরে জানতে পারি, ওই মেয়েটির অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। তাই পরে ছেড়ে দেই। তবে, তার কাছে কোন টাকা-পয়সা চাওয়া হয়নি।’
সংশ্লিষ্ট লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোদাচ্ছার সরদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ওই বিয়েতে আমারও দাওয়াত ছিল। ব্যস্ততার কারনে যাওয়া হয়নি। তবে, আমি শুনেছি মেয়েটির অনেক দিন আগেই বিয়ে হয়েছে।’
টিআইবির মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য আঞ্জুমান জুলিয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে আইনের প্রতি দিনদিন সাধারণ মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।’
তিনি ‘বাল্য বিয়ের অজুহাতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি’ জানান।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমান সজল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘কোনো বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে হলে কিংবা বাল্য বিয়ে ঠেকাতে হলে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে থাকতে হয়।’
ইউএনও আরো বলেন, ‘এছাড়াও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সহযোগিতায় পুলিশ বিয়ে বাড়িতে যেতে পারে। কিন্তু পুলিশ একা গিয়ে কোন বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে পারে না।’
‘পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি, মেয়েটির অনেক আগে বিয়ে হয়েছে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘লোকমুখে বিষয়টি শোনা যাচ্ছে। ভুক্তভোগীর পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন