কেউ কোনো ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে, ওই দিন থেকেই তার উল্টো দিন গণনা করা উচিত বলে মনে করেন আইন কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তিনি বলেন, ক্ষমতা একদিন শেষ হবে। কেউ চিরস্থায়ীভাবে কোনো চেয়ারে থাকে না। তাই চেয়ারে বসার দিন থেকেই রিভার্স ওয়েতে দিন গণনা করলে কাজগুলো ভালোভাবে শেষ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি। নিজের শিক্ষাজীবনের কথা তুলে ধরে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন স্কুলের পরীক্ষার ডেট ঠিক হতো, ওই দিন থেকেই ক্যালেন্ডারে উল্টোদিক থেকে দিন গণনা করতাম। যেদিন পরীক্ষা শুরু হতো, ওই দিনও ক্যালেন্ডারে জিরো লিখে রাখতাম। এভাবে দিন গণনা করায় আমার কখনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হয়নি। প্রতিদিনের হিসাবে আমি পরীক্ষার প্রস্তুতিগুলো নিতে পেরেছিলাম।’
কর্মজীবনেও একই পন্থা অবলম্বন করেছেন বলে জানিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতি ছিলাম মাত্র সাত মাস। শপথ গ্রহণের দিন থেকেই আমি অবসরের কথাও ভাবতে শুরু করেছিলাম। প্রতিদিন ক্যালেন্ডারে আর কত দিন বাকি আছে তা লিখে রেখেছি। দিন হিসাব করে পরিকল্পনা করেছি। তাই আমার তেমন একটা কষ্ট হয়নি। নিজের পরিকল্পনাগুলোর বেশির ভাগই আমি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম।’ বর্তমানে আইন কমিশনের দায়িত্ব পালনকালেও একইভাবে উল্টো দিন গণনা করেন বলে জানান সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দেখতে পাই, অনেকে ক্ষমতা পেলে ভুলে যান যে এই ক্ষমতার একদিন শেষ আছে। যে চেয়ার তাকে ক্ষমতা দিয়েছে, সেটা তাকে একদিন ছাড়তে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সত্যটা হচ্ছে, ক্ষমতাটা চিরস্থায়ী নয়। কেউ যদি ভেবে নেয় তার এই ক্ষমতার শেষ নেই, তাহলে তার পরিণতি খুবই খারাপ হয়। আমরা এমন অনেক নজির দেখেছি। পদের মেয়াদ কত দিন, আর আপনি কত দিন কাজ করতে পারেন, এটা সঠিকভাবে হিসাব করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নও করা যায়।’ উল্টোভাবে দিন গণনা করলে কর্মজীবন চলাকালে এবং পরে সব সময় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য থাকা যায় বলেও মন্তব্য করেন দেশের সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৯৮ সালের ২৭ এপ্রিল। স্থায়ী হন ২০০০ সালের ২৭ এপ্রিল। এরপর ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। হাই কোর্টে বিচারপতি থাকা অবস্থায় খায়রুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় প্রদান করেন। এ ছাড়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা, স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক সম্পর্কিত মামলা, রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার স্মৃতি সংরক্ষণ, ঢাকার চার প্রধান নদী রক্ষা, ঢাকার ট্যানারি স্থানান্তর এবং আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ফতোয়াসহ বিভিন্ন আলোচিত মামলার রায় আসে খায়রুল হকের আদালত থেকেই। বাংলা ভাষায় একাধিক রায় দিয়েছেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রধান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান এ বি এম খায়রুল হক। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হয়। ২০১১ সালের ১৭ মে তিনি অবসরে যান।
পাঠক মন্তব্য
You will never be forgiven for the death of many people by your decision. May you rot in hell.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন