বাংলাদেশের মূলধারার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে আজ সোমবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমেই কয়েকটি শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন- বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত শেখ হাসিনা
দৈনিক জনকণ্ঠ- শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরাপ্রধানমন্ত্রী
চ্যানেল আই অনলাইন- শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী
একুশে টিভি অনলাইন- বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা
আরটিভি অনলাইন- শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী
অন্তত দু’টি পত্রিকার স্ক্রিনশট দেয়া উচিত--
এখন দেখা যাক সংবাদের ভেতরে কী বলা হয়েছে। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদটি থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি--
“আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে। দ্য স্ট্যাটিসটিক্সের গবেষণায় এ মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। অার এ স্বীকৃতিকে সরকারের অর্জন হিসেবে মন্তব্য করে জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আস্থা রেখেছে বলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে বাংলাদেশের এই অর্জন অনেক অগেই সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি।”
এই রিপোর্টটিতে দু’টি বিষয় খেয়াল করার আছে। ১. শিরোনাম। ২. সংবাদের শুরুতেই লেখা বিশেষণটি (‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন’। জনকণ্ঠও একই বিশেষণ ব্যবহার করেছে।)।
বাংলাদেশ প্রতিদিন শিরোনাম করেছে “বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত শেখ হাসিনা”। কিন্তু আলোচ্য সংবাদের বিষয়বস্তু এমন শিরোনাম ‘ডিমান্ড’ করে না। কারণ ‘মন্ত্রিসভা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে’ এটা ফলোআপ সংবাদ। ‘কেন’ অভিনন্দন জানিয়েছে? ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত’ হওয়ায়। অর্থাৎ, মনোনীত হওয়ার বিষয়টি আগে ঘটেছে। আর সেই ‘খবর’ পেয়ে মন্ত্রিসভা অভিনন্দন জানিয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিন ‘খবর’টি আগে জানেনি। এবং পত্রিকাটি মনে করেছে, তার পাঠক এখনও মূল খবরটি (বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার) জানে না (অন্য সংবাদমাধ্যমও দেয়নি), তাই এটার পাঠক চাহিদা আছে। ফলে আগের ঘটনাকেই শিরোনামে এনেছে। যদি মনে করতো যে, এই খবর আগে থেকে মানুষের জানা, তাহলে উপরের প্রতিবেদনের শিরোনাম করতো ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন’। এবং এটাই সঠিক শিরোনাম।
এখানে একটি প্রশ্ন জাগতেই পারে, প্রচার সংখ্যায় বাংলাদেশের এক নম্বর পত্রিকাটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়া’র খবর রাখেনি কেন? এই খবর পাওয়ার জন্য মন্ত্রিসভার অভিনন্দন জানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো কেন পত্রিকাটিকে?
এই প্রশ্নটি শুধু বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য নয়, উপরের উল্লেখ করা সবক’টি সংবাদমাধ্যমের জন্য- যারা ফলোআপ ঘটনার সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে আগের ঘটনাকে নিয়ে শিরোনাম করেছে। কেন এত সংখ্যক সংবাদমাধ্যম এত বড় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিক সময়ে জানতে পারেনি? ((এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে, গুগলে ‘দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ এই বাক্যটির সাথে উপরিউক্ত পত্রিকা/পোর্টালগুলোর ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে সার্চ করে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে ‘ফলোআপ’ ঘটনা জানার আগে এরা কেউই এই বিষয়ে কোনো রিপোর্ট’ প্রকাশ করেনি।))
প্রশ্নটি আপাতত উত্তরহীন থাকুক। আমরা পরবর্তী পর্যায়ে যাই।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টে লক্ষ্য করতে বলেছিলাম তা হচ্ছে- যে সংগঠনটির ‘গবেষণা’য় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেটির পরিচয় হিসেবে লেখা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স’। অর্থাৎ, সংস্থাটি অনেক বড় এবং পরিচিত (খ্যাতি বলতেই তো ব্যাপক পরিচয় থাকাকে বুঝায়!)। এত বড় সংস্থার গবেষণার ফলাফল-- যা নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে-- কেন মন্ত্রিসভার কাছ থেকে জানতে হলো? আসলে তো এর উল্টো হওয়ার কথা ছিল! সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই জানার কথা মন্ত্রিসভা বা সরকারের!
এখন দেখা যাক আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম--
বিডিনিউজ- নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য মন্ত্রিসভার শোক
বাংলাট্রিবিউন- মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে ছয়টি আইনের খসড়া অনুমোদন
জাগোনিউজ- উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি: প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন
ঢাকা টাইমস: প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন
বিডিনিউজ ও বাংলাট্রিবিউনের রিপোর্টের স্ক্রিনশট যোগ করলাম--
এরা সবাই ফলোআপ শিরোনাম করেছে। এবং বিডিনিউজ ‘দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবর’কে প্রতিবেদনের ইন্ট্রোর মধ্যেও জায়গা দেয়নি। নিয়ে গেছে শেষের দিকে। ‘প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন’ শীর্ষক উপশিরোনামে লেখা হয়েছে-- “মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি বিষয়ের জন্য অভিনন্দন জানানো হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেওয়ায় মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে।”
পরের একটি প্যারায় বলা হয়েছে-- “মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্যা স্টাটেকটিকস ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক জরিপে দক্ষ নেতৃত্ব রাষ্ট্রনায়কোচিত গুনাবলী ও মানবিকতা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনায় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করে।”
এই রিপোর্টে খেয়াল করার ভিন্ন একটি বিষয় আছে। এখানে গবেষণা সংস্থাটির নাম বলা হয়েছে ‘দ্যা স্টাটেকটিকস ইন্টারন্যাশনাল’। আর বাংলাদেশ প্রতিদিনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘দ্যা স্টাটেকটিকস’। এই নামের গরমিলটা বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টেই পরিলক্ষিত।
বাংলাট্রিবিউন এবং জাগোনিউজ-ও এই অভিনন্দনের খবরকে ইন্ট্রোতে রাখেনি। পেছনের দিকে নিয়ে গেছে গুরুত্বহীনভাবে।
যাইহোক, এবার উপরের চারটি নিউজ পোর্টালের রিপোর্টের ‘ফলোআপ’ শিরোনাম এবং ‘গুরুত্বীহন ট্রিটমেন্ট’ দেখে মনে হতে পারে এরা আগে ‘দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়া’র খবর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে, তাই এখন শুধু ফলোআপ রিপোর্ট করলো!
কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার মতো বিষয় হলো, চারটি ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কীওয়ার্ড দিয়ে খোঁজে এবং ওয়েবসাইটগুলোর নাম আর ‘দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ পাশাপাশি সার্চ করে কোনো রেজাল্ট পাওয়া যায়নি। নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে, চারটি পোর্টালের কেউই আগে এ সংক্রান্ত কোনো খবর প্রকাশ করেনি। অর্থাৎ, এই চারটি সংবাদমাধ্যমের কাছেও খবরটি প্রথম এসেছে আজ, এবং সেটির সূত্র হচ্ছে একমাত্র মন্ত্রিসভার বৈঠক ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ব্রিফিং।
এত বড় একটি খবর প্রথম জানার পরও কেন এত গুরুত্বহীন আচরণ এই চার পোর্টালের? প্রশ্নটা পাঠকমাত্র তুলতে পারে।
এবার দেখা যাক অন্য একটি পত্রিকার আচরণ। দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে আজকের (সোমবারের) মন্ত্রিসভার বৈঠক সংক্রান্ত একটি মাত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে (রাত ১০টা পর্যন্ত পত্রিকাটির অনলাইনের সব রিপোর্ট চেক করা হয়েছে।) সেটির শিরোনাম ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা অনুমোদন’।
বৈঠকের বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্য তুলে ধরার পর শেষ প্যারায় লেখা হয়েছে- “আজকের সভায় কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতেও শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সভায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।”
কী অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য! দু’টি শোক প্রস্তাব এবং একটি অভিনন্দন প্রস্তাবের কথা জানালো পত্রিকাটি, কিন্তু উপরের অন্যসব সংবাদমাধ্যম যা জানালো সেই অভিনন্দনের খবর নেই প্রথম আলোতে! পত্রিকাটি এই তথ্য এড়িয়ে গেল কেন? প্রথম আলো কি প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্বের খবর ছাপাতে চায় না? নাকি ‘বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হওয়া’র খবর পত্রিকাটির কাছে নেই?
এবার এখানে কয়েকটি স্ক্রিনশট শেয়ার করছি।
## (গুগলের স্ক্রিনশট)
এখানে লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত সময়টা খেয়াল করুন। ‘3 days ago’ দেখাচ্ছে। এবার দেখুন ওয়েবসাইট দুটির নাম। সংবাদমাধ্যম হিসেবে কি এগুলো বাংলাদেশে সাধারণ সংবাদ-পাঠকদের কাছে পরিচিত? আরও আছে এধরনের অপরিচিত নামের কয়েকটি পোর্টাল, যারা তিন আগে থেকে ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স/দ্য স্ট্যাটিসটিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর বরাতে খবর প্রকাশ করে আসছিল। প্রথম আলো, বিডিনিউজ, বাংলাট্রিবিউন, চ্যানেল আইন অনলাইন, বাংলাদেশ প্রতিদিন-- এদের সবার আগে এই সব অপরিচিত পোর্টাল ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন’ একটি গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত গবেষণার খবর পেয়ে গেল?! এবং তাদের প্রকাশিত সেই খবর সরকার/মন্ত্রিসভা জেনে নিয়ে ‘অভিনন্দন প্রস্তাব’ পাশ করে ফেললো! কিন্তু বাঘা বাঘা সংবাদমাধ্যমগুলোর অফিসে সেই খবর পৌঁছালো না। এ কেমন সাংবাদিকতা!
## ১৬ মার্চ ভুঁইফোড় কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত খবরটির আরও দুটি স্ক্রিনশট।
এবার দেখা যাক ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন’ গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স’ ওরফে ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর সন্ধান কোথায় পাওয়া যায়?
বিডিনিউজকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুর ভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্যা স্টাটেকটিকস ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক জরিপে...।’ (জরিপ/গবেষণা একেক রিপোর্টের একেক কথা। আবার বিডিনিউজের ‘স্টাটেকটিকস’ বানানটি টাইপো নাকি এটিই সঠিক নাম তা বোঝার উপায় নেই।)।
নামটি ‘The Statistics’ ধরে নিয়ে গুগলের সহায়তায় কোনো গবেষণা সংস্থার নাম পাওয়া যায়নি। www.thestatistics.org নামে একটি ওয়েবসাইট পাওয়া গেলেও সেটিতে ক্লিক করে দেখা গেছে এই অবস্থা--
স্ক্রিনশট-
কানাডিয়ান একটি রক ব্যান্ডের সাইটটির তথ্য গুগল সার্চ থেকে জানা যায় এমন--
স্ক্রিনশট-
The Statistics research organization নামে সার্চ করে যে রেজাল্ট পাওয়া গেছে সেটি এমন--
The Statistics research organization Singapore লিখে সার্চ করে রেজাল্ট পাওয়া গেছে--
The Statistics International Singapore লিখে পাওয়া গেছে এই রেজাল্ট--
The Statistics International research organization Singapore লিখে পাওয়া গেছে এই রেজাল্ট--
কোথাও মন্ত্রিসভার অভিনন্দনের খবরে বর্ণিত নামের কোনো গবেষণা সংস্থা নেই। হতে পারে SEO সমস্যার কারণে গুগল এমন কোনো সংস্থা থাকার পরও সার্চ রেজাল্টে সেটি দেখাচ্ছে না। তবে এমনটি হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি জোরালো নয়। কারণ, ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন’ কোনো গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইটের ঠিকানা গুগল সার্চে না এলেও ওই সংস্থাকে নিয়ে উইকিপিডিয়ায় অল্পবিস্তর বর্ণনা থাকতো। কিন্তু সেরকম কিছু পাওয়া গেল না ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স’ ওরফে ‘দ্য স্ট্যাটিসটিক্স ইন্টারন্যাশনাল’ এর ক্ষেত্রে।
আরেকটা উপায়ে এই খবরকে যাচাইয়ের চেষ্টা করা যেতে পারে। তা হলো ইংরেজিতে খবরটি কোথাও প্রকাশিত হয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখা। যেহেতু গবেষণা মতে, শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, অন্যান্য আরও বেশ কয়েকটি দেশের প্রধানমন্ত্রীও ‘সেরা’ তালিকায় আছেন, ফলে তাদের দেশেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কথা। বিশেষ করে ‘প্রথম সেরা’ যিনি হয়েছেন তার দেশে তো সংবাদমাধ্যমে এই খবর না আসার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের প্রথম আলো/বিডিনিউজ ইত্যাদির মতো নিশ্চয়ই অলস বসে থাকার কথা নয় ‘সেরা’র খবরটি খুঁজে পাওয়া ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে!
এ জন্য বাংলাদেশের সেই অখ্যাত অনলাইন পোর্টালগুলোর একটির আশ্রয় নিতে হচ্ছে। (কারণ মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর খবর দিলেও বাকি দেশগুলোর খবর দেয়নি।)
ekattornews24.com নামে একটি ওয়েবসাইটে ১৬ মার্চ “বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা” শিরোনামে খবরে বলা হয়--
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এই তালিকার প্রথমে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। দক্ষ নেতৃত্ব, রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলী, মানবিকতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নসহ ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আলোচনায় থাকার বিষয় বিবেচনা করে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্টাটিস্টিকস ইন্টারন্যাশনাল’ নিজেদের করা এক জরিপ শেষে এই ঘোষণা দেয়।”
স্ক্রিনশট-
অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক নম্বর সেরা। best prime minister in the world বাক্যটি লিখে গুগল সার্চ করে যে ফলাফল পাওয়া গেল তা এই স্ক্রিনশট--
স্ক্রিনশট-
এখানে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক কোনো ফলাফল নেই। গত বছরের একটি ফেইক নিউজের খবর দেখা যাচ্ছে যাতে বলা হয়, ইউনেস্কো নরেন্দ্র মোদিকে ‘সেরা প্রধানমন্ত্রী’র হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটিও অবশ্য ২০১৬ সালের খবর।
এছাড়া ‘best prime minister’ ‘Sheikh Hasina second best prime minister’ ইত্যাদি কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করেও কিছু পাওয়া যায়নি। ভারতের বা কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোও বাংলাদেশের প্রথম আলোর মতোই সম্ভবত! ‘বিশ্বসেরা’ ব্যক্তিবর্গের সাফল্যের খবরের কোনো খোঁজ রাখেনা, এবং প্রকাশও করে না।
নোট:
এই লেখার শুরুর আগে আজ সোমবার সন্ধ্যায় ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জরিপে’ দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়া সংক্রান্ত অভিনন্দন বার্তা ফেসবুকে নিজের একাউন্টে পোস্ট বাংলাদেশে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক। তার পোস্টের নিচে এবং ইনবক্সে এই লেখক আলোচ্য সংবাদের সূত্র সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো রিপ্লাই পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রী মহোদয় কোনো রিপ্লাইয়ে কোনো সূত্র দিলে তা এখনে সাথে সাথে আপডেট করা হবে।
ফ্যাক্টচেক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন