হাওরের বাঁধে উঠায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় পাঁচ বছরের শিশু ইয়ামিন মিয়ার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে দেয়ার ঘটনায় যুবলীগ নেতা ও ২৮নং পিআইসির সভাপতি আব্দুল অদুদ মিয়া ও তার সহোদর আলম মিয়াকে আসামি করে সোমবার রাতে শিশুটির বাবা শাহানুর মিয়া বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এঘটনায় আব্দুল অদুদ মিয়ার ছোট ভাই আলম মিয়াকে (৩০) রোববার রাতে আটক করা হয়েছে। তাকে সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঐ পিআইসি পলাতক থাকায় থাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় গোপনে আপস-মীমাংসা করার চেষ্টা করেন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যার বিশ্বজিৎ সরকার। জানা যায়, তিনি একাধিবার অদুদের সাথে ফোনে কথা বলে মীমাংসা করার চেষ্টা করে অনুরোধ করেন।
এব্যাপারে চেয়ারম্যার বিশ্বজিৎ সরকারের সাথে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যুবলীগ নেতা আব্দুল আদুদের বর্বরতার শিকার হওয়ার এই ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে জোরালোভাবে প্রকাশের পর সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রোববার রাতে ছুটে যান এবং শিশুর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং ইয়ামিন মিয়ার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার নেন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান। তিনি শিশুটি ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ইয়ামিন মিয়ার চিকিৎসার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল খরচ বহন করবেন। তখন তিনি শিশুটির মা দিলরাজ বেগমের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা ও নতুন কাপড় ও ফল তুলে দেন।
এসময় তিনি বলেন, আমি-সহ আমার পুলিশ বাহিনী খুবই মর্মাহত এই ঘটনা শুনে। তার বিষয়ে বার বার খোঁজ নিচ্ছেন মাননীয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পুলিশ প্রধান ও ডিআইজি মহোদয়। তিনি বলেন, আব্দুল অদুদ সে যত বড় ক্ষমতাশালী হোক বা যে দলেরই হোক না কেন তাকে এই নির্মম বর্বরতার শাস্তি পেতে হবে। তাকে খুব দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে। সে কোনো ছাড় পাবে না।
এছাড়াও রোববার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাগণসহ ইয়ামিন মিয়াকে দেখতে যান। এবং তার সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।
এদিকে, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন শিশু ইয়ামিন মিয়ার বাড়ি সোলাইমানপুর গিয়ে তার স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং নগদ ১০ হাজার টাকা হাতে তুলে দেন।
ইয়ামিন মিয়ার পিতা শাহানুর জানান, ‘বাঁধে ক্ষতি হলে আমার কাছে বিচার দিত। আর এমন কি ক্ষতি হয়েছে যে, তাকে এভাবে আঘাত করতে হবে। আমার ছেলের হাতের ৩টি আঙ্গুল কেটে দিয়েছে অদুদ। আমার ছেলে এখন লেখাপড়া করবে কি করে? আমি অদুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আইনেই মাধ্যমেই তার কঠিন শাস্তি চাই।’
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় গত শনিবার বিকালে পাঁচ বছরের শিশু ইয়ামিন মিয়া নিজেদের গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ঘাস কাটতে মহালিয়া হাওরের ময়না খালি বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল হাওরে। এমন সময় হঠাৎ করেই সে বাঁধের উপর থেকে গড়িয়ে বাঁধের নিচে পড়ে যায়। এতে নির্মানাধীন বাঁধের ড্রেসিং করা কাজে সামান্য ক্ষতি হয়। এসময় সাবেক যুবলীগ নেতা ও মহালিয়া বাঁধের পিআইসি (নং ২৮) সভাপতি অদুদ মিয়া বিষয়টি দেখতে পেয়ে ইয়ামিন মিয়ার কাছে গিয়ে মারধর করে এক পর্যায়ে হাতে থাকা ঘাস কাটার কাঁচি কেড়ে নিয়ে হাতের ৩টি আঙ্গুল কেটে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়ামিন মিয়াকে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। সন্ধ্যার পরে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়।
আব্দুল অদুদ দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামের জমির উদ্দিনের ছেলে। আহত শিশু একেই গ্রামের শাহানুর মিয়ার ছেলে ও সুলেমানপুর শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ১ম শ্রেণীর ছাত্র। এঘটনার জানাজানি হলে জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গুরুতর আহত ইয়ামিন মিয়া সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন