গাজীপুরের শ্রীপুরের ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে শত শত মানুষ। সে বাড়ির দোতলায় মূল বেডরুমে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে ছিলেন ফারুক হোসেন প্রিয়কের স্ত্রী আলিমুন্নাহার অ্যানি। তাকে ঘিরে আপনজনেরা। কেউ পায়ে তেল দিচ্ছেন তো কেউ মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছেন।সোমবার রাত ৮টার দিকে বেজে উঠে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। আর সাথে সাথে ডুপ্লেক্স বাড়িটি থেকে উঠে গগনবিদারী চিৎকার। চিৎকার করছেন অ্যানি- ‘আমার কেউ নেই, তোমরা সবাই চলে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও।’স্বজনরা বেডরুমের দরজাটি বন্ধ করে যতটা সম্ভব ভিড় করা লোকজন সরিয়ে দেন। অ্যানি একবার ডুকরে কেঁদে ওঠেনতো আরেকবার কেঁপে কেঁপে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চান।এই বেডরুমেই স্বামী প্রিয়ক আর একমাত্র মেয়ে প্রিয়ন্ময়ীকে নিয়ে কত সময় কেটেছে অ্যানির। অথচ তার মাত্র কয়েক গজের মধ্যে নিচতলায় আজ কফিনে বন্দি স্বামী আর সন্তানের মরদেহ।
অ্যানির দুলভাই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অ্যানি স্বাভাবিক নেই। একবার বিশ্বাস করে তার স্বামী-সন্তান মারা গেছে তো আবার বলে ওরা মারা যায়নি। আশেপাশে মানুষের ভিড় সহ্য করতে পারছে না।’উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ৭১ আরোহী নিয়ে গত ১২ মার্চ দুপুরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।এতে বিমানের ৫১ আরোহী নিহত হন। উড়োজাহাজে চার ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। এদের ২৬ জনই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। বিধ্বস্ত বিমানে পরিবারের আরও দুই সদস্যসহ ছিলেন প্রিয়ক-অ্যানি দম্পতি ও তাদের একমাত্র শিশুকন্যা তামারা প্রিয়ন্ময়ী।
দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ী। আহত হন মেহেদী হাসান, সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও আলিমুন্নাহার অ্যানি। গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি০৭২ ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় আনা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সোমাবার প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ীসহ শনাক্ত হওয়া ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।এর পর প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ীর মরদেহ দাফনের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী-সন্তানকে চিরবিদায় জানানোর জন্য এর আগেই অ্যানিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
poriborton
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন