জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিণতি দেখে এগুতে চান ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়ার মতো তিনিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
শরফুদ্দিনের আইনজীবী মো. আহসানউল্লাহ পরিবর্তন ডটকমকে এই তথ্য জানান। বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ উচ্চ আদালতে আপিল করলেও মামলাটি এখনো হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করেননি তারা। এর কারণ জানতে চাইলে এই কৌশলের কথা জানান আইনজীবী।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায় পাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিল করা যায়। আমরা তাই করেছি। তবে তা এখনো হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করিনি। আগে দেখি, একই মামলার আরেক আসামি খালেদা জিয়ার আপিলের পরিণতি কী হয়? তিনি তো আগে আপিল করেছেন।
এই মামলায় উচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চার মাসের জামিন দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগ এই জামিনাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যে কারণে আপাতত কারামুক্ত হচ্ছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
হাইকোর্টের দেয়া জামিনাদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আলাদা দুটি আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাভোগরত তিন আসামির আরেকজন কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামালও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন।
মাগুরার সাবেক এই সংসদ সদস্যের আপিল আবেদনের শুনানি খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গেই হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের দেয়া একই রায় থেকে খালেদা জিয়া ও কাজী কামালের আপিল দুটি উদ্ভূত হওয়ায় শুনানিও একসাথে হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত।
শরফুদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তিনি যে আপিল করেছেন তা তো জানি না। হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করলে জানতাম।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, শরফুদ্দিনের আপিল নম্বরটি হচ্ছে ২২৯২/২০১৮।
এই মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিশেষ জজ আদালত। আরেক আসামি এবং বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, কাজী কামাল ও শরফুদ্দীন আহমদসহ অন্য ৫ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মোট ২ কোটিরও বেশি টাকা অর্থদণ্ডও দিয়েছেন বিচারিক আদালত। তবে খালেদা জিয়া ও কাজী কামালের অর্থদণ্ড স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।খালেদা জিয়া ছাড়া এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। তারা পলাতক রয়েছেন। আর খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ রয়েছেন কারাগারে।
২০০৮ সালের জুলাই মাসে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বে থাকার সময় এই মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়াসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়।সেখানে অভিযোগ করা হয়, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দেয়া হলেও, তা এতিম বা ট্রাস্টের কাজে ব্যয় করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালে অভিযোগ পত্র দেয়া হলেও ২০১৪ সালের মার্চে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
ঢাকার বকশিবাজারের বিশেষ জজ আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন