মানসিক ভারসাম্যহীন হাফিজার কোলে ফুটফুটে দুই বছরের একটি ছেলে শিশু। এক পা-দুপা করে মায়ের পিছন পিছন হাঁটে অবুঝ শিশুটি। কখনো হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে রাস্তায়। মা হাফিজা কিছুদূর গিয়ে ছেলেকে না পেয়ে দৌড়ে ফিরে যান নিজের নাড়িছেড়া ধনের কাছে। কোলে তুলে নিয়ে তারপর আবার পথ চলা শুরু।
রাস্তায় ফেলে দেওয়া নষ্ট খাবার হাফিজা নিজে খান। আবার সন্তানটিকেও খেতে দেয়। কিন্তু হাফিজা নিজেও জানে না তার সন্তানের বাবা কে? কে তার জন্মদাতা পিতা?
বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা শহরে হাফিজা বেগম (২৬) মানসিক ভারসাম্যহীন। উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গত একমাস ধরে একটি খোলা মাঠে ঝুপটি বানিয়ে সন্তানকে নিয়ে বাস করেন তিনি। কখনো খেতে পান, আবার কখনো না খেয়ে দিনরাত্রী যাপন করেন তিনি।
সম্প্রতি হৃদয়বিদারক এ বিষয়টি স্থানীয় কিছু মানুষকে নাড়া দিলে তারা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে বামনা থানা পুলিশ হাফিজা ও তার সন্তানকে গত রোববার ঝুপড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
বামনা থানা পুলিশ জানায়, মানসিক ভারসাম্যহীন হাফিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্বামীর নাম বলতে পারেননি। তবে তার বাবার বাড়ী পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রকান্দা গ্রামে ও বাবার নাম মন্নান দফাদার এইটুকু বলতে পারেন। তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। ওই ফোনের সূত্রধরে গত সোমবার হাফিজাকে তার বাবার বাড়ি চন্দ্রকান্দা গ্রামে সকালে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বামনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মানজুরুর রব মুর্তাযা আহসান জানান, খাদ্য-বস্ত্রহীন অবস্থায় রোদের তাপে ওই গৃহবধূ তার সন্তানসহ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। মা-ছেলের এমন মানবেতর জীবন দেখে স্থানীয় অনেকেই ব্যাথিত হন। কেউ কেউ তাদের খাদ্য ও বস্ত্র সহায়তা দেন। বামনা থানা পুলিশ হাফিজাকে তার বাবার বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেওয়ায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।
এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান মো. আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, ‘মানসিক ভারসম্যহীন হাফিজা প্রায়ই আমার মোবাইল ফোনে কল দিতো। তবে শুধু কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই শোনা যেতো না। পরে তাকে আর খুঁজে না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পুলিশের উদ্যোগে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশের মানবিক উদ্যোগ। তার খোঁজ নিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমার মনে হয় মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনরা তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল।’
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি এম শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘আমাকে ওই মানসিক ভারসম্যহীন হাফিজার সন্ধান দেওয়ার পর তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। পরে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক স্যারের পরামর্শে তাকে তার বাবার বাড়ী মির্জাগঞ্জের চন্দ্রকান্দায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার স্বামী কে তা জানা সম্ভব হয়নি। এমনকি ওই সন্তানটির পিতা কে তাও সে বলতে পারছেনা।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন