সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভরাডুবির নেপথ্যে বেশকিছু রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত্মকে দায়ী করছেন সংশিস্নষ্ট আইনজীবীরা।
বিশেস্নষকরা মনে করছেন, আইনজীবী ভোটাররা নির্বাচনে দুটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরম্নত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ। আর দ্বিতীয়টি হলো, আপিল বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী মনে করেন, এস কে সিনহার বিরম্নদ্ধাচরণ করা আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের ভরাডুবির অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, 'সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের বিষয়ে সরকার ও তার সমর্থিত আইনজীবীরা যে বিরূপ ভূমিকা রেখেছিল, সেটা সাধারণ আইনজীবীদের কাছে পছন্দনীয় বা গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ ছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাতে রেখে তাদের চাকরির যে শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, সেটাও আইনজীবীরা সহজভাবে নেননি। এসব কারণেই তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের ভোট দেননি।'
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগে স্থগিত করাটাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের পরাজয়ের তৃতীয় কারণ বলেও মনে করেন।
তিনি বলেন, 'পাঁচ বছরের সাজার মামলায় কনিষ্ঠ আইনজীবীরা শুনানি করলেই হাইকোর্ট জামিন দিয়ে দেয়। তবুও হাইকোর্ট তাকে জামিন দিল, কিন্তু আদেশ একটু ঘুরিয়ে দিল। এরপর সেই আদেশের ওপর আপিল বিভাগ আবার হস্ত্মক্ষেপ করল। এর ফলে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে যে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, সেটা আইনজীবীরা পছন্দ করেননি।'
পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, 'সভাপতি ও সম্পাদক পদে বিজয়ী আর পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান খুবই কম ছিল। অন্যান্য পদে কি হলো জানি না!'
তিনি দাবি করেন, 'আমার যতদূর মনে হচ্ছে, বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গে আইনজীবীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার কারণে ১০০'র মতো ভোট এদিক-ওদিক হয়েছে। আর এই ভোটের কারণেই সাদা প্যানেলের পরাজয় হয়েছে।'
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদ্যনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের প্রসঙ্গটি ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগে আটকে দেয়ার পেছনে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত্ম ছিল, এর প্রতিবাদ জানাতে সাধারণ আইনজীবীরা বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলকে জয়যুক্ত করেছে।
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, 'বিচার বিভাগের ওপর সরকার যে হস্ত্মক্ষেপ করছে, এটা মানুষ পছন্দ করে না। আর প্রধান বিচারপতিকে (এস কে সিনহা) তারা যেভাবে বিদায় দিয়েছেন, সেটাও যথাযথ হয়নি। এরপর তারা মাসদার হোসেন মামলা নিয়ে গেজেট (অধঃস্ত্মন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত্ম বিধিমালা) করেছে, এটাও মানুষ পছন্দ করেনি। শেষ পর্যন্ত্ম খালেদা জিয়ার জামিনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এতে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা আমাদের নির্বাচিত করেছেন। দেশের কোথাও যে গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার নেই, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেছে।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন