গরমের শুরুতে ও পর্যটন মৌসুম শেষ প্রান্তে এসে সপ্তাহিক ও স্বাধীনতা দিবসের ছুটিকে কেন্দ্র করে জমজমাট কক্সবাজার। ফলে পর্যটকে পদচারণায় মুখোরিত সৈকত নগরীর বালিয়াড়ি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যটদের ভিড়ের কারণে এখন সেখানে ঈদের আমেজ বইছে। শেষ মৌসুমে জমজমাট ব্যবসার কারণে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভ্রমণ পিপাসিদের আগাম বুকিং হয়ে আছে কক্সবাজারের সাড়ে ৪শত হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজসহ আবাসনস্থল। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
কক্সবাজার গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, থার্টিফাস্ট নাইট, ইংরেজি বর্ষকে বিদায়-বরণ ও জানুয়ারির শীতকালীন অবকাশসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটি উপভোগ করতে কক্সবাজারে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে এবার বলতে গেলে সারা বছরই দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারি, দানশীল ব্যক্তিবর্গ মিলে সরব ছিল পর্যটন জোনের সকল ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। অনেক গেস্ট হাউস ও ফ্লাট পুরো মাসের জন্য বুকিং নিয়েছে এনজিও বা অন্যরা। হোটেলগুলো কমবেশি নিত্যদিন ব্যবসা করলেও বেশিরভাগ রুম খালি থাকত। তবে, সপ্তাহিক ছুটিসহ স্বাধীনতা দিবসের ছুটির কারণে এখন পর্যটকে টৈ টম্বুর কক্সবাজার। শুক্রবার সকাল থেকে জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
তবে পর্যটকদের অভিযোগ, এই আনন্দের মাঝেও কিছু কিছু হোটেল-মোটেল-রেঁস্তোরায় গলাকাটা দাম নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ মৌসুমের শেষ সুযোগ হিসেবে তাৎক্ষণিক বুকিংয়ের ক্ষেত্রে হোটেল কক্ষের ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। দালালদের মাধ্যমে বুকিং দেয়া পর্যটকরাই এ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বেশি।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক হোটেল মালিক বলেন, দালালদের সঙ্গে ৫০ শতাংশ ভাগাভাগির চুক্তি থাকায় বাধ্য হয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে বেশি দাম নিতে হচ্ছে হোটেল সংশ্লিষ্টদের।
সী নাইট গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু থাকায় এ বছরের পর্যটন মৌসুমে ভাল ব্যবসা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত টানা বুকিং রয়েছে আমাদের। আমরা কোয়ালিটি মেনটেইন করে সব সময় একই দাম রাখি। কেউ কেউ হয়তো চাহিদার সময়ে নীতি বির্সজন দিয়ে বদনাম কুড়ায়।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এম এন করিম বলেন, মৌসুমের শেষ সময়ে ছুটিতে টানা বুকিং পেয়েছে অধিকাংশ হোটেল। তারকা হোটেলগুলোর রুম ভাড়া সব সিজনেই এক। তার উপর মৌসুম ভেদে ডিসকাউন্ট থাকে। তবে সাধারণ হোটেলগুলোর কিছু কিছুর বিরুদ্ধে বেশি দাম আদায়ের অভিযোগ শুনতে হয়। পর্যটনের স্বার্থে এটার একটা নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।
কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বী বলেন, পর্যটকরা দেবতার মতো। তাদের সেবা দিতে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মুখিয়ে থাকেন। নিরাপত্তা সেবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে লাবণী মোড়, সুগন্ধা পয়েন্ট, মেইন বীচসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কয়েকটি টিম সার্বক্ষনিক কাজ করছে। মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল ৮ থেকে রাত ৯ পর্যন্ত মোবাইল ডিউটিতে রয়েছে অপর টিম। এরা ছাড়াও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে মাঠে রয়েছে।
সৈকত ছাড়াও পর্যটন স্পট ইনানী, সেন্টমার্টিন, হিমছড়ি, সোনাদিয়া, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, কদুম গুহা, রামুর রামকোট, ১শ ফুট সিংহশয্যা বৌদ্ধমূর্তি দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন। যাচ্ছেন বার্মিজ মার্কেট,শুটকী মহাল।
ঢাকা থেকে আসা নবদম্পতি হান্নান ও বেগম হান্নান জানান, কাজের চাপ থাকায় বিয়ের পর এক সঙ্গে কোথাও যাওয়া হয়ে উঠেনি। তাই মৌসুমের শেষ টানা ছুটি পেয়ে দীর্ঘতম সৈকতে একান্তে সময় কাটাতে এসেছি। চিন্তা করেছিলাম গরম শুরু হয়েছে, তাই পর্যটক কম থাকবে। কিন্তু ধারণারও বেশি পর্যটক সৈকতসহ বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন শহর হিসেবে সহজলভ্য সেবা নিশ্চিতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। আবাসন সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সে বিষয়ে বলা থাকে। যারা নীতি ভ্রষ্ট তারাই অভিযোগ সৃষ্টির কাজগুলো করে। পর্যটন এলাকায় ঘুরছে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি টিম। পর্যটকরা হয়রানির যেকোন অভিযোগ তাদের কাছে পৌছালে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন