নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। শুধু প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ নয় অর্থের বিনিময়ে জাল দলিল সৃজন করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও অন্যের জমি নিজের নামে দলিল করে লিখে নিতে জমির মালিককে অপহরণ করে জিম্মি করার একটি চক্রও রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে। গাজীপুর কালীগঞ্জের রেজিস্ট্রিার অফিসে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বদলি করা হয়।
এদিকে গাজীপুর কালীগঞ্জের রেজিস্ট্রার অফিসে থাকাকালীন ঘুষের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এছহাক আলী। শুধু ঘুষ নয়, জাল দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রির পর ওই জমি রেজিস্ট্রির মতো ঘটনার নেপথ্যেও কারিগর ছিলেন তিনি। কালীগঞ্জে তিনি জালিয়াতির ‘মাস্টার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জের মঠবাড়ী গ্রামের কলেজছাত্র প্রভাস রোজারিওকে দুই বছর আগে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হোটেলে। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে দলিলে রোজারিওর স্বাক্ষর ও টিপসই নেয় অপহরণকারীরা। পরদিন সকালে তাকে তার বাড়ির পাশের রাস্তায় ফেলে যায়। আর তার স্বাক্ষরে ৬২ দশমিক ০২ শতাংশ জমি লিখে নেয়া হয়। জোর করে স্বাক্ষর ও টিপসই নেয়ার সময় কালীগঞ্জের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মন্ডলের পক্ষে নকলনবিশ হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন অপহরণকারী চক্রের সাথে। ওই জমি কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদের অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়।
রেজিস্ট্রির সময় সাব-রেজিস্ট্রারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নকলনবিশ সমর কুমার ধর। অপহরণ থেকে শুরু করে পুরো ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন এছহাক। অপহরণকারী চক্রটিকে এছহাকই নিয়ন্ত্রণ করতেন এমন অভিযোগ কালীগঞ্জবাসীর। এ ঘটনায় প্রভাস রোজারিও কালীগঞ্জ থানায় মামলাও করেছিল।
এছাড়া একই উপজেলার ৬৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর কালীগঞ্জ থানায় এছহাক মন্ডলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী মতিউর রহমান। আর প্রভাস রোজারিও ও মতিউর রহমানের করা মামলায় তদন্তকারী অফিসার অভিযোগের সত্যতা পায় এবং এছহাক আলী জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তদন্তে তা প্রমাণিত হয়।
এখন কালীগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে নারায়ণগঞ্জে আসার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এছহাক আলী। বন্দর উপজেলায় যোগদানের পর সরকারি দলের একটি গ্রুপের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও দলিল করতে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে ফেসবুকে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে এছহাক আলী মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন