বাংলাদেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জনগণের নৈতিক মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি ইসলামের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
নয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, সেসব এলাকার প্রতি উপজেলায় ২টি করে মোট ১ হাজার ১০টি দারুল আকরাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এসব মাদ্রাসার স্থান নির্বাচন করা হয়েছে এবং ৫ হাজার ৫০ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৯ লাখ শিশু শিক্ষার্থীকে এবং ২৯ হাজার ২০০টি সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০ লাখ ২২ হাজার কিশোর-কিশোরীসহ ১৯ লাখ ৪১ হাজার জনকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পবিত্র কোরআনের ডিজিটাল ভার্সনসহ আলাদা ওয়েবসাইট িি.িয়ঁৎধহ.মড়া.নফ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ কমপ্লেক্সে ৫তলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
ইমাম প্রশিক্ষণের একাডেমির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৩৫ হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চার হাজার নতুন মসজিদ-পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ১৬ হাজার বাড়ানো হয়েছে। ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এককালীন সাহায্য ও সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৫ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮ লাখ শিশুকে নৈতিকতা শিক্ষা এবং ২৫০টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্যাগোডাভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। গত অর্থবছরে খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালনা ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সহায়তা দেয়া হচ্ছে সব শ্রেণীর মানুষকে : সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দিচ্ছে সরকার। পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর পাশপাশি সহায়তা পাচ্ছে প্রতিবন্ধী, ভবঘুরে, নিরাশ্রয় এমনকি হিজড়া ব্যক্তিরাও। অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় দেয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের সব ধরনের সহায়তায় দেশে বর্তমানে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এসব সেবা কেন্দ্রে একটি করে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। সুদক্ষ ও মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের সমন্বয়ে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত অটিজম রিসোর্স সেন্টারে মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছর বেদে ও অনগ্রসর ৯ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা এবং উচ্চ স্তরে এক হাজার টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া স্কুলগামী হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সমপরিমাণ উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। আর্থিক সহায়াতা কর্মসূচির মাধ্যমে ২ হাজার ৫৫৩ জন কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৩ জন দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন