নাটোরের সিংড়ায় স্থানীয় চৌগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাব হোসেন জিন্নাহর স্বেচ্ছাচারিতায় ৩৩ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে চলন বিলের ঐতিহ্যমন্ডিত শতবর্ষী স্কুলে লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে আলতাব হোসেন জিন্নাহ রাজনীতির পাশাপাশি উপজেলার তেরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র হাজিরা দিয়েই চলে যান বলে জানান ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ জাহান আলী।
সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এরশাদুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিস ওই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম সহকারি শিক্ষক নরেন্দ্র নাথ সরকারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করে। গত ৮ এপ্রিল সহকারি শিক্ষক নরেন্দ্রনাথ সরকারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সহযোগিতা কারার জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি আলতাব হোসেন জিন্নাহকে একটি চিঠি দেয়া হয়। সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে চাকরির নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া শিক্ষক এরশাদুল ইসলামকে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে বহাল রাখেন। আর এতে করেই যতো বিপত্তি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে বেতন বিলে স্বাক্ষর করতে না দেয়ার কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছে না কোন শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি পদে নিয়োগের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়োগ দিয়েছেন বিদ্যালয় সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেন জিন্নাহ।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব হোসেন চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সহকারি শিক্ষক মীর সোলায়মান আলী ও কারিগরি শাখার মোসাদ্দেক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই বাড়ি চলে যান। এতে করে চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিয়ে এখন অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, সভাপতি আলতাব হোসেন অবৈধভাবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এরশাদুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে স্কুলের বিভিন্ন আয়ের টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন আর নিরীহ শিক্ষকদের এর মাশুল গুনতে হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক এরশাদুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিষ্ঠানে দু’টি গ্রুপের কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আর তিনি এখন প্রধানের দায়িত্বেও নেই তবে স্কুল থেকে বেতন দিয়ে জীববিদ্যার শিক্ষক হিসেবে রাখার কথা হওয়ায় তিনি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে চৌগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আলতাব হোসেন জিন্নাহ বলেছেন, গত চার থেকে পাঁচদিন আগে তিনি বেতন বিলে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। এছাড়া ১৫লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার কথাও সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। যদি কেই এমন অভিযোগ করে থাকেন তাহলে মিথ্যা বলেছেন। এছাড়াও তিনি তেরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত সেই প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র হাজিরা দিয়েই চলে যাওয়ার পরও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সরকারী কোষাগার থেকে কেন নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি।
এবিষয়ে তেরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শাহ জাহান আলী বলেছেন, আলতাব হোসেন জিন্নাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান। তাকে নিয়মিত স্কুলে থাকার কথা বলায় কয়েকবার আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে তিনি হুমকি পেয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন