গুলিস্তান যাওয়ার পর গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। আমি হয়তো ভেবেছিলাম এটাই আমার শেষ। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে হয়তো শেষ। গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু সংবাদ সম্মেলনে এভাবে বর্ণনা করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর।
এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে নুরসহ পরিষদের আরো দুই যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান ও ফারুক আহমদকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া বলে জানান পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
পরে জানা গেছে, মিন্টু রোডে অবস্থিত মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘কথা বলার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। পরে তারা চলে গেছেন।’
ছাড়া পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে নুর বলেন, আজকে আমরা সারা বাংলার ছাত্রসমাজের যৌক্তিক দাবি কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে এসে হত্যার হুমকি পাচ্ছি। পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে অনেকে দেখেছে বিধায় ফিরে এসেছি। তা না হলে ফিরে আসতাম কিনা, এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারতাম কিনা সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম।
‘তাই আপনাদের সাংবাদিকদের বলবো- এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের সৈনিকদের উপর যখন অত্যাচার হবে, তখন আপনারা আপনাদের কলম দিয়ে তুলে ধরুন। সাংবাদিকরা একটি জাতির বিবেক। আপনারা যদি কিছু লুকিয়ে রাখেন, এই দেশের মানুষ কিছু জানবে না। আপনারা আপনাদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সত্যটি তুলে ধরবেন, কখনো সত্য তুলে ধরতে কার্পণ্য করবেন না’ যোগ করেন নুর।
তিনি বলেন, আজকে সকালে সংবাদ সম্মেলনের পর আহত ভাই-বোনদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার প্ল্যান ছিল আমাদের। তাদের দেখে আমরা চাঁনখারপুলে খেতে যাব। কিন্তু আমরা ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি গেটে যাওয়ার পরপরই কিছু লোক, অনেকের হাতে দেখেছি রিভলবার, তারা আমাদের একজনকে টেনেটুনে বলে আমরা ডিবির লোক, গাড়িতে ওঠো।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা বলেন, আমরা পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে, আমাদের সুযোগ না দিয়ে ধাক্কা মেরে গাড়িতে উঠিয়েছে। গুলিস্তান যাওয়ার পর গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। এর আগে আমাকে হেলমেট দিয়ে আটকানো হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো ভেবেছিলাম এটাই আমার শেষ। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে হয়তো শেষ।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নুর বলেন, ‘আমরা সবসময় সরকারের সঙ্গে সমাঝোতা চেয়েছি, সরকারের কথা শুনেছি। তাদের ডাকে সচিবালয়ে গিয়েছি। আমাদের দাবি-দাওয়া যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন, আমরা সেটাকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছি। তারপরও আমাদের বারবার হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে, গুম করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আজকে তো তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খুবই নাটকীয় ঘটনার মধ্যদিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমাদের চোখ বাঁধা ছিল। আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়ি। চোখ খুলে দেখি আমরা ডিবি কার্যালয়ে।’
এই ছাত্রনেতা বলেন, সারা বাংলার ছাত্রসমাজকে জানিয়ে দিতে চাই- আমরা শুধু নিজের জন্য এই আন্দোলন করিনি। তোমাদের সকলের জন্য নিজেদের জীবনকে হত্যার সম্মুখীন করে এই আন্দোলনে এসেছি। এজন্য আমাদের উপর বারবার নির্যাতন নেমে আসছে। তোমরা যদি সোচ্চার না হও, আর কেউ তোমাদের হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার মানুষ থাকবে না। জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমি বলব- শুধু আমি নই, যখনই কোনো অন্যায় হবে, তখনই তোমরা গর্জে উঠো। আমি আজকে ঢাকা মেডিকেলের সামনে দেখেছিলাম শত শত লোক। কেউ তো বলেনি- কেন আপনারা এই ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন? বলেছিলাম- ভাই আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ আমরা তো সবার স্বার্থের জন্য এই আন্দোলন করেছিলাম।
নুর বলেন, হয়তো এই চারজনের কারো মৃত্যুর খবরও পেতে পারেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে একটা কথা বলব- পৃথিবীতে শত শত মানুষ জন্মাবে, শত শত মরবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা ন্যায়ের পথে আন্দোলন করেছিলাম,সেই আন্দোলনে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, হোক। তবুও তোমরা মাথা উঁচু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন