কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস ওরফে নবাকে থানায় নেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের পিকআপে চড়েই তিনি বাড়ি ফেরেন। বাসায় ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বশির আহম্মেদ।
সোমবার দুপুরের দিকে পৌর কাউন্সিলরের ফোন থেকে কল করে সদর থানায় ডেকে নেয় নবাই বিশ্বাসকে। এর আগে সকালের দিকে এক দফায় পুলিশ তার বাড়িতে যায়। সে সময় পরিবারের সদস্যদের নাম-পরিচয়সহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নেয় পুলিশ। নবাবের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভার মুরারীদহ গ্রামের মিয়াপাড়ায়। সে রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। রাশেদ ছাড়াও আরও দুটি মেয়ে রয়েছে তার। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
নবাব যুগান্তরকে বলেন, বেলা ১টার দিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তার বাড়িতে আসে। তার ধারণা ওই ব্যক্তি সাদা পোশাকের পুলিশ। এরপর তার ওয়ার্ডের কাউন্সিল বশিরের ফোন থেকে থানায় ডাকা হয় তাকে। ফোন পেয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তির সঙ্গে ইজিবাইকে চড়ে থানায় আসে সে। সেখানে বসা ছিলেন নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বশিরসহ অনেকই। হঠাৎ করে অজ্ঞাত স্থান থেকে ওসির কাছে একটি ফোন আসে। নবাব অভিযোগ করেন এরপরই তাকে বিভিন্ন ভাষায় গালমন্দ করা শুরু হয়। ছেলে জামায়াত-শিবির করে কিনা সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য নেয়া হয়। নবাব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গালমন্দ করে কয়েক ঘণ্টা তাকে বসিয়ে রাখা হয় থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে।
সে আরও জানায়, কিছু সময় পরে ঢাকা থেকে ছেলে রাশেদ ফোন করে তাকে। ইতিমধ্যে নবাবকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি চলে আসেন পৌর কাউন্সিলর বশির। বিকাল ৪টার দিকে পুলিশের পিকআপে বাড়ি ফিরে আসেন নবাব। দুপুরের দিকে এ খবর জেলা শহরের ছড়িয়ে পড়ে। খবর নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, একটি পত্রিকার খবরের সূত্র ধরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পরিবারের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য নবাবকে থানায় ডাকা হয়। পরে তাকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে দেয়া হয়। পুলিশ যে কোনো ব্যক্তিকে থানায় ডাকতে পারে।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, পুলিশের গাড়িতে করে নবাবকে বাড়িতে ছেড়ে দেয়ার খবর দেয়া হয়েছে তাকে। রাশেদ জামায়াত-শিবির করে না বলেও জানান কাউন্সিলর বশির।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে আটক করেছিল পুলিশের ঢাকার গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর তিন নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। ধরে নিয়ে যাওয়া নেতারা হলেন- নূরুল হক নূর, রাশেদ খান ও ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ অভিযোগ করেন, তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভায়। সকালে ঝিনাইদহ থানার পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। দুপুরে তার বাবা নবাই বিশ্বাসকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করা হয়েছে। তার বাবা ও তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবু পুলিশ জোর করে তাদের পরিবারকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রমাণ করতে চাইছে বলে আভিযোগ করেন রাশেদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন