সুফিয়া কামাল হল শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি ইশরাত জাহান এশার প্রতি অন্ধ আবেগে এবং সাংগঠনিক প্রেমে মজেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। যার ফলে গঠনতন্ত্র না মেনেই কেন্দ্রীয় কমিটির একজনসহ ওই ঘটনায় মোট ২৪ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১০ এপ্রিল দিবাগত রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের (২৪জন) ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
এই বহিষ্কারাদেশ নিয়েও মেয়াদোর্ত্তীণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবারো চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। কয়েকজন ভোরের পাতার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এশার প্রতি সহানুভূতি শুরুতে যে সোহাগ জাকির দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল, তারাই এখন তার সাংগঠনিক প্রেমে অন্ধ হয়ে পড়েছেন। এটা ছাত্রলীগের মতো এত বড় সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দুরদর্শিতার অভাব। সোহাগ-জাকির যে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারেন না তা আবারো প্রমাণ করলো।
তারা আরো বলেছেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, সংগঠনের পদধারী কাউকে বহিষ্কার করতে হলে কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক ডাকতে হয়। এমনকি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তদন্ত করতে হবে এমনকি তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কোনো সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির অনেক নেতাই বলেছেন, সোহাগ-জাকিরের একক সিদ্ধান্তেই এমন বহিষ্কারাদেশ এসেছে। তারা তো এশাকেও বহিষ্কার করেছিল। আবার দুইদিন পর ফুলের মালা পড়িয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করেছে। তাদের কোনো চরিত্র আছে বলে মনে করেন না অনেকে।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সাহিত্য সম্পাদক খালেদা হোসেন মুন। যিনি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কিন্তু তিনি গত এক বছর ধরে সুফিয়া কামাল হলেই থাকেন না। ঘটনার দিন রাতেও তিনি হলে ছিলেন না। ঘটনার সাথে তার কোনো যোগসাজশ নেই সরাসরি। তারপরও তাকেই সবার আগে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপর যে মেয়েটির পায়ের রগ কাটা গিয়েছিল সেই মুরশিদা যিনি হল কমিটির সহ-সভাপতি, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাকেও কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। এছাড়া ছাত্রলীগের পদধারী আতিকা হক স্বর্ণা, মিরা, জান্নাতী আক্তার সুমি, শ্রাবণী, শারমিন আক্তার, আশাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরও কোনো ধরণের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়নি। এরমধ্যে আশা মেয়েটি হাত ভাঙা ছিল, তাই ঘটনার রাতে তিনি নিচেই নামেননি। এছাড়া অন্য যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা অনেকে কোনোদিনই ছাত্রলীগ করেননি। ছাত্রলীগের কর্মীও নন এমন ১০ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মনিরা নামে যাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে তিনি গত ৮ তারিখ থেকে ভারতে রয়েছেন, এখনো দেশেই আসেননি।
বহিষ্কারের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয়কে কয়েকবার ভোরের পাতার অফিসের টেলিফোন থেকে কল করা হলেও তারা ধরেননি।
তবে, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক খালেদা হোসেন মুন বলেন, আমার অন্যায় কি সেটাই তো আমি জানতে পারলাম না। তদন্ত কমিটি কি তদন্ত করলো সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলে মুন বলেন, ছাত্রলীগ আমার কাছে অনুরাগ, প্রেম ও আদর্শের নাম। আমি কোনো ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কোনোদিন খারাপ ব্যবহারও করি নাই। এভাবে আমাকে অসম্মানিত করার দায়ভার সংগঠনকেই নিতে হবে। আমি দোষ করলে তা প্রমাণ করতে হবে এবং আমাকে দোষ খন্ডানোর সুযোগ দিতে হবে। সেটা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। আমি বিষয়টি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, আমাদের অভিভাবক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে জানতে চাইবো। তিনি দেশে ফিরলেই আমাকে কি অপরাধে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো সেটার জবাব আমাকে জানতেই হবে, যারা আমাকে বহিষ্কার করেছেন। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে কারো ব্যক্তিগত রোষানলে পড়ে বহিষ্কার হয়ে পরাজিত হবো, এতটা দুর্বল নই।
ভোরের পাতা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন