ইসলামী ব্যাংকে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করার পর নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আরও পদত্যাগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এখন ব্যাংকের একজন মালিকপক্ষ নতুন করে আরও এক হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ চাচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে ব্যাংক এখনো তা দিতে পারছে না। এসব মিলিয়ে ব্যাংকে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
গত বছর ব্যাংকটির মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তনের পর অস্থিরতা শুরু হয়। ইতোমধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। অনেকে বদলি হয়েছেন। আবার নতুন নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। আগে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ সীমার নিচেই থাকত। গত বছর মালিকানায় পরিবর্তন আসার পর থেকে ব্যাপকহারে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণের সীমাও অতিক্রম করে গেছে।
প্রচলিত বিধি অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে সার্বিক আর্থিক সূচক ভালো থাকলে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। সম্প্রতি এ হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ৮৯ শতাংশের বেশি রয়েছে তাদের আগামী বছরের মার্চের মধ্যে সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিনিয়োগ (ঋণ) দিয়েছে ৬৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ-আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি। তারা ওই সীমার চেয়ে ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা বেশি বিতরণ করেছে।
একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রভাবশালী এক মালিক দুটি কোম্পানির নামে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দাবি করেন। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে সেই ঋণ দেয়নি ব্যাংকটি। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এএমডি) ডিএমডি পর্যায়ের ৪ জন এবং একজন এসইভিপি পদত্যাগ করেছেন। তারা কী কারণে পদত্যাগ করেছেন তা পদত্যাগকারী ও ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
এর পর গত মঙ্গলবার পদ ছাড়েন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এরা দুজনেই সরকারের সাবেক সচিব। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাজমুল হাসান ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন নতুন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। পরিচালনা পর্ষদের বেশ কিছু কমিটিতেও রদবদল হয়েছে। সেলিম উদ্দিন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন।
এদিকে গতকাল কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কখন কার চাকরি যায় সেই বিষয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। ঠিক কী কারণে চাকরি হারাতে হচ্ছে সেটিও তাদের কাছে অজানা। অপেক্ষাকৃত সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে এই আতঙ্ক অনেক বেশি।
পদত্যাগের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান কোনো চাপের কথা অস্বীকার করে বলেন, ব্যক্তিগত কারণেই পদত্যাগ করেছি।
এ বিষয়ে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা পদত্যাগ করেছেন। ঋণসংক্রান্ত বা অন্য কোনো চাপে পদত্যাগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশিস চক্রবর্ত্তী বলেন, অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন হতেই পারে। এ ছাড়া পদত্যাগ করার অধিকার সবার আছে। কোনো অনিয়ম হলে সেটি দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা কোনো চাপে পড়ে পদত্যাগ করেছেন কিনা সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের জানা নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভাতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আরাস্তু খান। তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হকও সেদিন পদত্যাগ করেছিলেন। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন