সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাতে সংসদ সদস্যরা (এমপি) নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন সে দাবি জানায়। ক্ষমতাসীন দলের দাবির পরপরই গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঝপথেই ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা- ২০১৬’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এমনকি এজন্য আকস্মিক বৃহস্পতিবার বিকালে কমিশন বৈঠকও ডাকা হয়েছে। বুধবারই সভা ডাকার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের বিষয়ে বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কমিশন সভার কথা আমি জানি না। সভার কোনো নোটিশ পাইনি এবং পড়িনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আচরণ বিধি সংশোধন নিয়ে আমাদের (কমিশনারদের) মধ্যে আলাপ হয়েছে। বৈঠকে হয়তো আচরণবিধি পর্যালোচনা করে কোনো সংশোধনী আনা হতে পারে। তবে কী ধরনের সংশোধনী আসছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
আইন সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বুধবার বলেন, আমি আইন সংস্কার কমিটির প্রধান। অথচ বৃহস্পতিবার কমিশন সভা ডাকা হয়েছে তা আজ (বুধবার) জানলাম। হঠাৎ করেই ডাকা এ সভা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে আগামী ১৫ মে ভোট হবে।
গত ১৩ এপ্রিল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে সিটি করপোরেশনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানান।
একইসঙ্গে সংসদীয় আসনের সীমানা এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’ বড় কোনো সংশোধনী না আনারও প্রস্তাব করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা- ২০১৬ এর সংশোধন’ এবং বিবিধ।
জানা গেছে, কমিশন সভার জন্য ইসির যুগ্ম-সচিব (ন্যিঃব্যঃ-১) মো. আবুল কাশেমের স্বাক্ষরে কার্যপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা নিম্ন লিখিত বিষয়ের উপর কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেগুলো হচ্ছে-
১. বর্তমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা।
২. আরপিও সংশোধনের বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাইপূর্বক উপস্থাপন করা। এবং,
৩. ২০০৮ ও ২০১৩ সালের মতো জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বহাল রাখা।
কার্যপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালাসমূহ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি বিদ্যমান নির্বাচনী সকল প্রকার আইন ও বিধিমালাসমূহ যাচাই-বাছাই করে যুগোপযোগী এবং সংবিধানের সঙ্গে সংঙ্গতিপূর্ণ করার বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে।... এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন আচরণ বিধিমালা অধিকতর সংশোধনের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আচরণ বিধিমালার ২(১৩) ও ২২ ধারায় সংশোধনী আসতে পারে। ২(১৩) ধারায় ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ এর সংজ্ঞা দেয়া আছে। এতে বলা হয়েছে- ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ অর্থ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোন ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র বুঝাবে।
আর ২২ ধারায় ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের’ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরুপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন