রাজশাহীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় নারীসহ সাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে আটক হওয়া ‘জঙ্গি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ’ এই সাত জন একই পরিবারের সদস্য। বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার ছয়ঘাটি ও কাশিয়াডাঙ্গা থেকে আটক হওয়া সাত জনের একজন বেণীপুরে ‘জঙ্গি’ হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও দাবি করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, গত ১৪ এপ্রিল আটককৃতদের মধ্যে দুই জন পহেলা বৈশাখকে ‘হিন্দু পৌত্তলিকতা ও অপসংস্কৃতি’ উল্লেখ করে লিফলেট বিতরণ করেছে।
আটককৃতরা হলো– ছয়ঘাটি গ্রামের মৃত কইমুদ্দীন শেখের ছেলে হাসান আলী (৪৩), তার স্ত্রী শেফালী খাতুন (৩৫), তার দুই মেয়ে ফারিহা খাতুন কনা (১৭) ও হানুফা খাতুন (১৯) এবং তার ভাই মৃত রেজাউল করিমের তিন মেয়ে ফারজানা আক্তার সুইটি (১৭), রাজিয়া সুলতানা তিশা (২২) ও রোজিনা সুলতানা কলি (২৫)।
পুলিশের ভাষ্য, কনা ও সুইটি পহেলা বৈশাখকে ‘হিন্দুয়ানি কালচার’ উল্লেখ করে লিফলেট বিতরণ করেছে। তারা দুজনেই প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। হানুফা খাতুন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে ফিজিক্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, তিশা রাজশাহী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করছে এবং কলি প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছে।
আটককৃত নারীদের চার জন (ছবি- প্রতিনিধি)
পুলিশ জানায়, হাসান আলী ‘জেএমবির তালিকাভুক্ত’ সদস্য। সে বেণীপুর ‘জঙ্গি’ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকদের পরিচয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন বিকালে কনা ও সুইটি পহেলা বৈশাখকে বিজাতীয় বলে লিফলেট বিতরণ করে আত্মগোপনে চলে যায়। তখন থেকে পুলিশ তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছিল। সেই অভিযানের ধারাবাহিকতায় তাদের আটক করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা লিফলেট বিতরণের কথা স্বীকার করেছে। এ ছাড়া, লিফলেট বিতরণের আগেও তারা বিভিন্ন সময় গোপন বৈঠক করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এ ছাড়া, হাসান আলীও বেণীপুর জঙ্গি হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে আমরা তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। সে তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য। এর আগেও সে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেলে ছিল। বেণীপুর জঙ্গি হামলা মামলাটি গত বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে হয়। মামলার এখনও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। তবে এই মামলায় যারা আটক হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, হাসান আলী বেণীপুরে জঙ্গি হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের কাছ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে।’
আটককৃত নারীদের কয়েকজন (ছবি- প্রতিনিধি)
পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এই দুই পরিবারের সবাই বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করতো। বিভিন্ন স্থানে তারা জেএমবির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গোপনে বৈঠকও করতো। লিফলেট বিতরণ করতো। তাদের সঙ্গে আরও এক জঙ্গির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
পুলিশের ভাষ্য, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখকে ‘বিজাতীয়’ বলে যে লিফলেটটি বিতরণ করা হয়েছিল, তাতে সংগঠনের নাম লেখা আছে ‘আবহ ফাউন্ডেশন’। আর লিফলেটের লেখাও দক্ষ হাতের লেখা।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ধারণা, সংগঠনটি ভুয়া। তবে ওই লিফলেট কোথা থেকে ছাপা হয়েছে বা কীভাবে তাদের হাতে এলো, এ বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন