একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও ভোট আয়োজনের চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা শুরু করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ২০০৮ সালে এবং কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৪ সালে দুই দফা প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পরে আর তা বাস্তবায়িত হয়নি।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের আগ্রহে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ‘প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের হিসাব পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৭৫ লাখের মত।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে না ফিরে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা সমস্যা ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসির সপ্তদশ সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
সৌদি আরবে বেশি প্রবাসী থাকায় প্রাথমিকভাবে তাদেরই প্রথম ভোটার করার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ভোটের চ্যালেঞ্জকেই বড় মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবাসে ভোটাধিকার ও এনআইডি করার মতো বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা সবার মতামত নিচ্ছি। এরই একটা ধাপ সেমিনারের আয়োজন। আইনি কাঠামো তৈরি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সার্বিক সুপারিশ পেলেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে একটা রূপরেখা মিলবে।”
বিশ্ব পরিস্থিতি
>> আফগানিস্তান, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রবাসীদের ভোটের বিধান নেই।
>> ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ বিদেশে অবস্থানত নাগরিকদের জন্য ভোট চালু করার পর বিলুপ্ত করেছে।
>> দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, ভারত, মালদ্বীপে বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের ভোটের ব্যবস্থা রয়েছে।
>> যুক্তরাজ্যে চালু রয়েছে প্রক্সি ও পোস্টাল ভোট।
>> অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৪৯ সাল থেকে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ চালু আছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে বিদেশে ভোট আয়োজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মত দিয়েছেন এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তারা।
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে ভাবছেন তারা।
দূতাবাসে একটি কক্ষে লোকাল সার্ভার স্থাপন; প্রবাসীদের সংখ্যানুপাতে রেজিস্ট্রেশন টিম তৈরি করে কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং নিবন্ধন কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও দক্ষ আইটি কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয় রয়েছে এসব প্রস্তাবের মধ্যে।
তবে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, সংহিসতা ঠেকানো, পোস্টাল ব্যালটের স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও তাদের ভাবতে হচ্ছে।
এনআইডি উইং সুপারিশ করেছে- সুবিধা অসুবিধা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত ৮ এপ্রিল বলেন, সরকার কিংবা জাতীয় সংসদ চাইলে ইসি প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিতে প্রস্তুত।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ভোটের নিয়ম আছে। আগামী নির্বাচনের আগে এসব পদ্ধতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন