বগুড়ায় আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে ছিনতাই ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিনিয়তই হচ্ছে চুরি, ডাকাতি ছিনতাই অপহরণ। বেড়েছে খুনের ঘটনাও। পুলিশি টহলের মধ্যেই এসব ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে রাত নয়টার পর থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে। পুলিশ বলছে ওই সব এলাকায় টহল পুলিশ দেয়া আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েকটি বড় ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বগুড়ার মানুষ। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ছিনতাই, চুরি ডাকাতি বন্ধ করতে পারছেন না পুলিশ। তাদের অভিযোগ, শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ছিনতাইইকারী, মাদক বিক্রেতারা এসব ঘটনা ঘটালেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। এমনকি এসব সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না। স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলে পুলিশও তাদের হাতে মার খাচ্ছে।
পুলিশের ওপর হামলা
গেল মার্চ মাসের ২৮ তারিখে পুলিশের অতিরিক্ত উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুল আমল এবং ডিএসবির কনস্টেবল মোস্তাকিম হোসেনকে পিটিয়ে আহত করেন যুবলীগ নেতা আলহাজ্ব শেখ বাহিনী। ওই সময় পুলিশের কাছে থাকা ২ হাজার ৭০০ টাকা ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় আলহাজ্ব বাহিনী প্রধান আলহাজ্ব শেখসহ ৫ জনকে পুলিশ আটক করলেও মূল আসামিদের থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। অপর ৪ জনকে আটক দেখানো হযেছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন, শাজাহানপুর উপজেলার পদ্মগাড়ী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে স্বপন মিয়া, বগুড়া সদরের নাটাইপাড়া বউবাজার এলাকার ওয়াহেদ আলীর ছেলে মাহিদুল হাসান (১৯), সদরের সূত্রাপুরের শেখ শাহ আলমের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৮), একই এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে মমিনুল ইসলাম (২৫)।
পাসপোর্ট অফিস কর্মকর্তার ওপর হামলা
পুলিশের ওপর হামলার পরদিন ২৯ মার্চ বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাহজাহান করিবের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা সবাই যুবলীগ নেতা ও ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাকিম রহমানের বাহিনী। তাকে হত্যার উদ্যেশেই মারধর করা হয়েছিলো। ওই কর্মকর্তার কাছে মোস্তাকিম চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তার ওপর হামলা করেন। মারাত্মক জখম হন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মেয়র কার্যালয় দখল
এর আগে ৪মার্চ যুবলীগের আরেক নেতা ফেম মান্নান বগুড়া পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমানের অফিস কক্ষের দরজা ভেঙে তার চেয়ার দখল করেন।ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কিছুই করেনি পুলিশ।
পোস্ট অফিসে ডাকাতি
মার্চের ১১ তারিখ রবিবার দুপুরে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা পোস্ট অফিসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে দুই ডাকাত উপজেলা পোস্ট অফিসে যান। তারা পোস্ট মাস্টার জাহানুর ইসলামকে থানার লোক পরিচয় দিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাহেব থানায় ডেকেছেন বলে জানান। এসময় ডাকাতরা মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে শিবগঞ্জ থানার ওসি পরিচয় দিয়ে পোস্ট মাস্টারকে থানায় যেতে বলেন। পোস্ট মাস্টার দ্রুত শিবগঞ্জ থানায় গেলে দুই ব্যক্তি অফিসে থাকা পেকার শ্রী বাদল চন্দ্র রাজভরকে রশি দিয়ে বেধে ফেলেন। এরপর অফিসের লকার ভেঙে ৪ লাখ টাকা লুট করা হয়।
করিম বাহিনীর উত্থান
ব্লাকমেইল করে মেয়েসহ ব্যবসায়ীর উলঙ্গ ভিডিও ধারণ করে চাঁদাবাজী এবং মারধর করে আহত করিম বাহিনীর প্রধান লতিফুল করিম। ওই ঘটনায় তিনি আরও দুই যুবককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় তার নামে তিনটি মামলা হয়। প্রত্যেক মামলায় করিম প্রধান আসামি। লতিফুল করিম বগুড়া জেলা যুবলীগের প্রভাবশালী সদস্য। তিনি শহরের পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়া চেলোপাড়া পূর্ব বগুড়া (চন্দনবাইশা) সড়কে সিএনজি অটোটেম্পু চাঁদা আদায় কার্যক্রমের সঙ্গেও তিনি জড়িত রয়েছেন। এর আগে তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ না খুললেও এবারই প্রথম থানায় মামলা হলো।
সাবেক সেনা সদস্য খুন
গত ২১ মার্চ ছিন্তাইকারীর ছুরিকাঘাতে সাবেক সেনা সদস্য জাহান বক্স (৬০) খুন হন। তিনি চকলোকমান কলোনী এলাকার মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শহরের কলোনি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর রাতে বগুড়ায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছিলেন আরেক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সার্জেন্ট শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
চিকিৎসকের ব্যাগ ছিনতাই
চলতি মাসের ৮ এপ্রিল শহর থেকে বাসায় ফেরার পথে চিকিৎসক সাবিনার সূত্রাপুর রোডে প্রকাশ্যে ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ওই ব্যাগে নগদ টাকা এবং দুইটি স্মার্ট মোবাইল ফোন ছিল। সাবিনা বগুড়ার সাংবাদিক জিয়া শাহীনের স্ত্রী। ওই রাতেই শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকা থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এর আগে ৩ এপ্রিল শহরের জামিল নগর এলাকার একটি বাসা থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি হয়।
অটোরিকশা ছিনতাই
চলতি মাসের ৯ এপ্রিল সোমবার রাতেও সদরের ধরমপুরে ছিনতাইকারীর হাতে সাইদুর রহমান (৩৫) নামে এক অটোরিকশাচালক খুন হন।ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করে অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয়। এর আগে মার্চের শেষের দিকে বগুড়ার শাজাহানপুরে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চালকের হাত, পা ও মুখ বেঁধে গর্তে ফেলে রেখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়। উপজেলার গোবিন্দপুর জোড়া ব্রিজের পূর্ব পাশে পাকুড়গাছের নিচে রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
চালকলে ডাকাতি
অটোরিকশা ছিনতাইয়ের আগের দিন ৮ এপ্রিল রবিবার বগুড়ার আদমদীঘির একটি চালকলে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা চালভর্তি ট্রাক নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মাসুদরানা নামের এক ডাকাতকে আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হযেছে।
কাজে আসছে না পুলিশ ফাড়ি
গত এক মাসের মধ্যে ফাঁড়ীর আশ পাশ থেকে তিনটি বাসার গেটের তালা ভেঙে ৪টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। সম্প্রতি নারুলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জানালার গ্রিল কেটে কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় জিনিপত্র নিয়ে গেছে। সাবগ্রামের পত্রিকার হকার আলমগীরের সাইকেল ভোর ৫টায় নারুলী ফাঁড়ীর সামনেই ছিনতাই হয়। এসময় তার কাছে থাকা পত্রিকা কেনার ৫ হাজার টাকাও ছিনতাই হয়। আলমগীর জানান, তিনি দ্রুত ফাঁড়িতে খবর দিলেও তার ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। এর আগে সুমন এন্টারপ্রাইজের কয়েক লাখ টাকা ফাঁডির সামনে ছিনতাই হয়। তারও কোন সুরাহা হয়নি। নারুলী উত্তর পাড়ায় অটো রিকশাচালককে অজ্ঞান করে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল হারানো এক ব্যক্তি জানান, তার মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার রাতে তিনি ২টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্তত ২০ বার ফাঁড়ির টেলিফোনে ফোন দিলেও কেউ ফোন ধরেনি। বগুড়ার ৭টি ফাঁড়ির অবস্থা ঠিক এরকমই। প্রশ্ন উঠেছে বগুড়া সদর থানার বিরুদ্ধেও। তাদের বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষ দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ করছেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই ছিনতাই হলেও পুলিশ তাদের আটক করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তবে আগের চেয়ে ছিনতাই, চুরি কমেছে দাবি করে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ হোসেন জানান, পুলিশের ১৭টা টিম রাতে শহরে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। প্রত্যেক ফাঁড়ির পুলিশ ওই টহলে অংশ নিচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন