নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাসুম নামে এক যুবককে নারী দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ৫০ হাজার টাকা আদায় করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাশিকুর রহমান শান্ত।বুধবার (২৫ এপ্রিল) দিনগত রাত আনুমানিক ৩টায় সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হাউজিং ফকির বাড়ি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এএসআই মাশিকুর ও তার নারী সোর্স সাথীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এমসআই মাশিকুরের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি ঘঁনা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার মাসুম ওই এলাকার মৃত কসাই আব্দুল খালেকের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাশিকুর জালকুড়ি, ২নং ঢাকেশ^রী এলাকায় ডিউটিতে ছিলেন। এসময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাথী নামে তার এক নারী সোর্সকে মোবাইলে ফোন করে মাসুমের বাড়িতে পাঠায়। ওই নারী রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মাসুমের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে মেয়েটি মাসুমের বাড়িতে পৌঁছে গেছে এ খবরটি অপর এক সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর এএসআই মাশিকুর তার নির্ধারিত এলাকা ছেড়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি না নিয়ে তিনি তার এলাকার বাইরে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংস্থ ফকির বাড়ি এলাকায় যান এবং মাসুমের বাড়িতে প্রবেশ করেন।
এএস আই মাশিকুর ঘরে ঢুকেই নারী নিয়ে অসামাজিক কাজ করার অপরাধে আটকের কথা বলে মাসুমকে ব্যাক মেইলের ফাঁদে ফেলে। মাসুম এর প্রতিবাদ করলে এএসআই মাশিকুর তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে মাসুম এবং এএসআই মাশিকুরের মধ্যে তুমুল বাকবিতর্ন্ডা শুরু হয়। গভীর রাতে এমন বাকবিতণ্ডার শব্দ পেয়ে এক পর্যায়ে এলাকাবাসী এসে মাসুমের বাড়িতে জড়ো হয়। পরে এলাকাবাসী এএসআই মাশিকুর এবং নারী সোর্স সাথীকে অবরুদ্ধ করে আটকে রাখে। এসময় সাথীকে এলাকাবাসী মারধর করে।
পরে বিষয়টি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানতে পেরে পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আজিজ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) রজব আলীসহ অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে এএসআই মাশিকুর ও সোর্স সাথীকে উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার ভোর সকাল ৬টায় থানায় নিয়ে আসে। অপরদিকে মাশিকুরের বাসায় মাদক দ্রব্য রয়েছে সোর্স রাজীবের এমন ভূয়া বক্তব্যে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে।এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই মাশিকুর অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি পরিস্থিতির শিকার। আমাকে পরিকল্পনা করে ফাঁসানো হয়েছে। আমি নির্দোষ। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ভোর রাতের দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ে আমার বাসায় যাচ্ছিলাম।
তবে মাশিকুরের সোর্স সাথী ব্যাক মেইলিংয়ের বিষয়টি শিকার করে জানায়, মাশিকুর স্যারের সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়। এর আগে তার নির্দেশে আরো কয়েকটি এ ধরনের কাজ করেছি। প্রতিটি কাজে তিনি আমাকে ৩ হাজার করে টাকা দিয়েছে। এ কাজে পুষিয়ে দিবে বলেছিলো।এলাকাবাসী আরো জানান, গত এক থেকে দেড় মাস আগে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাশিকুর এই নারী সোর্স সাথীকে দিয়ে ব্ল্যাক মেইলিং করে সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকার মৃত আমিন বেপারীর ছেলে মেসার্স হালিমা স্টোরের মালিক বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, একই এলাকার আবুল ভান্ডারীর কাছ থেকে ১৬ হাজার ৭’শ টাকা ও ২টি মোবাইল এবং ইলেকট্রিশিয়ান হযরতের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করেছে।
তাদের অভিযোগ, মাশিকুর এলাকার নিরীহ লোকজনকে সোর্সের মাধ্যমে টার্গেট করে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে সোর্স সাথীকে দিয়ে ফাঁদ পেতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্ল্যাক মেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বানিজ্য করে আসছিলো। সে একই এলাকায় প্রবাসী বিপ্লবের বাড়ীতে এক বছরের বেশী সময় ধরে ভাড়া থাকলেও বাড়ীওয়ালাকে সময়মতো ভাড়া দেয় না। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে বাড়িওয়ালাকে বাড়ী বিক্রি করিয়ে ছাড়বে বলেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।এ ঘটনার ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকায় এএসআই মাশিকুর ও নারী সোর্সের সাথে এলাকাবাসীর মধ্যে ঝামেলার কথা শুনে ফোর্স পাঠিয়ে তাদেরকে থানায় এনেছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। অভিযোগ প্রমানিত হলে এএসআই মাশিকুর ও সোর্স সাথীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
purboposhchim
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন