ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরের নয়নপুরে কুরুলিয়া খাল (এন্ডারসন খাল) থেকে গত ২২ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া মাথা বিহীন মরদেহটি গৃহবধূ মোছা. ইয়াছমিন আক্তারের (২২)। নিহত ইয়াছমিন জেলা সদরের ভাদুঘরের ইব্রাহীম আলী বাবুর স্ত্রী ও জেলার আশুগঞ্জের উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে। মনোমালিন্যের জেরে তাকে হত্যা করেছে স্বামী ইব্রাহীম।
বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের কাউতুলি এলাকা থেকে স্বামী ইব্রাহীম আলী বাবুকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবু পৌর এলাকার ভাদুঘর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে।
স্বামী ইব্রাহীমের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তির তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধারে শহরের কাউতুলিতে কুরুলিয়া খালে (এন্ডারসন খাল) অভিযান চালায় ডুবুরি দল। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিয়াউল হক।
ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিয়াউল হক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, গত ২২ এপ্রিল কুরুলিয়া খাল থেকে বস্তাবন্দী মাথা বিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথা না থাকায় প্রাথমিক ভাবে মরদেহটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার ইয়াছমিনের মা মনোয়ারা বেগম সদর হাসপাতাল মর্গে একটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে দেখতে আসে। মরদেহটির মাথা বিচ্ছিন্ন থাকায় সনাক্ত করতে পারেনি তিনি। মনোয়ারা বেগম তার মেয়ে হারিয়ে যাওয়া ও থানায় সাধারণ ডায়েরীর সূত্র ধরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াছমিনের স্বামী ইব্রাহীম আলী বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যা করার কথা স্বীকার করে জানায়, মাথা বিচ্ছিন্ন মরদেহটি তার স্ত্রী ইয়াছমিনের। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি।
তিনি জানান, ইব্রাহীম জিজ্ঞাসাবাদে জানায় ২০১৩ সালের আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে মোছা. ইয়াছমিন আক্তারকে ৩ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতো। এরই জেরে গত ১৬ এপ্রিল রাতে খুন করা হয় ইয়াছমিনকে। খুন করার পর মরদেহটি বস্তাবন্দী করে রাখা হয়। পরে বিচ্ছিন্ন করে মাথা ও দেহ বস্তাবন্দী করে আলাদা ভাবে ফেলে দেওয়া হয় কুরুলিয়া খালে।
জিয়াউল হক আরো জানান, ইব্রাহীমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুরুলিয়া খালে বিচ্ছিন্ন মাথাটি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে অংশ নেয় চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৬ জন ডুবুরির দল। কিন্তু মাথাটি উদ্ধার করা যায়নি।
তিনি আরো জানান, ইব্রাহীম হত্যাকাণ্ডের দুই ঘণ্টা পর ইয়াছমিনের বাবার বাড়ির মোবাইলে কল দিয়ে ইয়াছমিনকে খোঁজ করে। তখন ইয়াছমিনের মা মনোয়ারা বেগম জানায় ইয়াছমিন তো এখানে আসে নাই। তখন ইব্রাহীম রাগান্বিত কন্ঠে বলেন, ' ইয়াছমিন তো অনেক সময় আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে আপনাদের বাড়ির কথা বলে। এখনো এসে পৌছে নাই। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেন। তখন মনোয়ারা বেগমের সাথে ইব্রাহীম থাকতো। তখনও ইয়াছমিনের মা মনোয়ারা বেগম ধারনা করতে পারেননি তার মেয়ের খুনিকে সাথে নিয়েই মেয়েকে খুঁজছেন। মেয়ের খোঁজে অনেক কবিরাজের কাছেও গেছেন। ইব্রাহীম শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে যান এক কবিরাজের কাছে। ওই কবিরাজ মনোয়ারা বেগমকে বলেন, 'তোমার মেয়ে এক ছেলের হাত ধরে নোয়াখালীতে পালিয়ে গেছে'। কবিরাজের কাছে সন্ধান করে ব্যর্থ হয়ে পরে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। গত ২২ এপ্রিল মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর, খবর পেয়ে মনোয়ারা বেগম যখন সদর হাসপাতাল মর্গে যায় সাথে ছিলেন ইব্রাহীম। তখন সে বলেছিল মরদেহটি ইয়াছমিনের নয়।
জিয়াউল হক আরো জানান, ইব্রাহীমকে আরো ব্যাপক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন আশা করছি বিস্তারিত আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন