দেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরিগুলোর বিজ্ঞপ্তি প্রায় একই সময় দেওয়া হয়। চাকরিপ্রার্থী হাজার হাজার শিক্ষার্থীও প্রায় সবকটিতেই আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন করলেও চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণই করতে পারছেন না অনেকে।
কেননা বিজ্ঞপ্তির মতো, প্রতিটি পরীক্ষার সময়ও নির্ধারণ করা হচ্ছে একই দিনে। কখনো কখনো একই সময়ে। ফলে পরীক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষা এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী কর্মকর্তার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চাকরিপ্রার্থীরা জানান, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের বিভিন্ন পদের লিখিত পরীক্ষা একই দিনে প্রায় একই সময়ে পড়েছে।
ফলে কেন্দ্রগুলোর বাইরে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা কিছু হতাশ মুখ।
এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আজকে আমার তিনটা পরীক্ষা ছিল। প্রথম হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষা, বিকেলে সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি উত্তরা ব্যাংকের পরীক্ষা। আমি দিতে পারছি না।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত শুক্রবার, মানে ২০ তারিখেও এমনটি হয়েছে। একই টাইমে। আর টাইম তো মেইনটেইন করা যায় না। যেমন, আমি যদি এখানে ১০টা থেকে ১১টা পরীক্ষা হয় বা ১১টার পরে যেকোনো টাইমে পরীক্ষা হয়, তখন তো আমি, ওই সিটটা ধরতে পারব না।’
এভাবে পরীক্ষা দিতে না পারায় চাকরির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এক শিক্ষার্থী। জিজ্ঞেস করলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কিন্তু খুব কষ্ট করে আবেদন করেছি। কিন্তু আমি কিন্তু আজকে পরীক্ষা দিতে পারলাম না। এটা আমার খুব দুঃখ লাগতেছে আর কী। দেখা যাইতেছে, ওই প্রশ্নটার প্রিপারেশন আমার খুব ভালো ছিল। কিন্তু দেখা যাইতেছে আমার যেকোনো একটা বাইছা নিতে হইতাছে। তার ফলে আমরা একটা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হইতেছি।’
একই দিনে এত পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষা জমা হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে পরের দিন শনিবার যাতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এমন অনুরোধ জানান অনেক শিক্ষার্থী।
দীর্ঘদিন বেকার থেকে অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে এই পরীক্ষার আবেদন ফিগুলোও অনেক বড় একটা বোঝা হয়ে যায়। এ অবস্থায় টাকা দিয়ে আবেদন করেও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকেই।
এমনই এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একই দিনে ৪টা, ৫টা, ৮টা, ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো, প্রত্যেকটা পোস্টে আবেদন করছি। এই যে, আমাদের টাকা এইভাবে গচ্চা যাচ্ছে প্রতিটা পরীক্ষায়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা আমাদের সঙ্গে তামাশা, ঠাট্টা করা ছাড়া কর্তৃপক্ষের আর কিছুই না।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণেই এমন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মতামত জানান অনেকেই। দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত এক বছরে কর্মসংস্থান কমেছে এক লাখ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। মোট বেকারত্বের ১১ দশমিক ২ শতাংশই উচ্চ শিক্ষিত। এসব শিক্ষিত তরুণদের বেশিরভাগেরই পছন্দ সরকারি চাকরি। কিন্তু যথাযথ আবেদন করেও চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা, তাঁরা সরকারি চাকরির জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাতেই উপস্থিত হতে পারছেন না।
আবার এতে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নন, হিমশিম খাচ্ছেন পরীক্ষাকেন্দ্র ব্যবস্থাপকরাও। পরীক্ষার আগের রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যানজটময় ঢাকা শহরে পরীক্ষার দিন ছোটাছুটি করতে করতে চাকরিপ্রার্থীরা রীতিমতো কাহিল। এর মাঝে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র খুঁজতে গিয়েও অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন