‘আলহামদুলিল্লাহ, চুক্তি হয়ে গেছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের পালা। অবিলম্বে নির্মাণ কাজও শুরু হয়ে যাবে’- বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণ চুক্তিস্বাক্ষরের খবরে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত সময়েই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ঋণ প্রদানের জন্য শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) চীনের বেইজিংয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় চায়না এক্সিম ব্যাংক তাদের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তিস্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে সব জল্পনার অবসান হলো। বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হক ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. সুন পিং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি কর্মকর্তারা ও চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনোমিক কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য ঋণের পরিমাণ ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার (২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা)। মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, চুক্তিস্বাক্ষর উপলক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল চীনে গেছেন গত ২৫ এপ্রিল। তাদের মধ্যে আছেন প্রকল্প পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর দিন থেকেই সেখানে যেন রেল যোগাযোগ থাকে, সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ নির্দেশনা দেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন অর্থাৎ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন রেল সংযোগ চালুর বিষয়টি এতদিন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও অবশেষে তা কেটেছে।
জানা গেছে, মোট ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে চীন সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। এই টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে ১০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চায়না এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে এই প্রকল্পের অর্থ ছাড় তো দূরের কথা, এতদিন চুক্তি পর্যন্ত হয়নি। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর কাজ ৪১ শতাংশ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেখানে রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। ফলে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে রেল সংযোগ চালুর বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এটি পদ্মা সেতুর তুলনায় বড় প্রকল্প। এরপরেও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার জন্য কয়েকবার প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল চীন সফর করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইআরডি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি। চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে ইআরডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গেছেন।কিন্তু দফায় দফায় চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেও সহায়তার অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনও অগ্রগতি হয়নি। ইআরডির পক্ষ থেকে এ বছরের ১৫ জুনের মধ্যে অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে চুক্তিস্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও চায়না এক্সিম ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা চুক্তিস্বাক্ষর করলো।
banglatribune
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন