নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করার দুই দিনের মাথায় খোয়া বের হয়ে যাওয়ায় সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে আজ শুক্রবার সকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা মাঝাপাড়া গ্রামে। পরে শিডিউল অনুযায়ী সড়কের নির্মাণ কাজ করার দাবিতে এলাকাবাসী সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় নর্দার্ন বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫৪ হাজার ২শ' ৯৮ টাকা ৩২ পয়সা ব্যয়ে চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেল্লাবাড়ি হাট ভায়া দর্জিবাড়ি, বুড়ির হাট এবং চাঁদখানা ঘাট উন্নয়নে ৮ প্লাস ৮৬৫ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন করার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। টেন্ডারে কাজটি পায় নওগাঁ মুক্তির মোড়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসআই, জেসমিন জয়েন্টভেনচার। কাজ শুরুর তারিখ ১/১২/২০১৬ ও কাজ শেষের তারিখ ১৫/৪/২০১৮।
আজ শুক্রবার এলাকাবাসীর অভিযোগে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেল্লাবাড়ি বাজার থেকে শুরু করে সারোভাষা ব্রিজ পর্যন্ত ২ দশমিক ৬শ' মিটার সড়কের কাজ শেষ করে সারোভাষা ব্রিজ থেকে মাঝাপাড়া পর্যন্ত ১ দশমিক ৭শ' মিটার রাস্তা ডাব্লিই ভিএম করে রেখে চলে যান। পরে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে মার্চ মাসে মাঝাপাড়া মোড় থেকে চাঁদখানা বুড়ির হাট হয়ে সড়কের শেষ সীমানা পর্যন্ত বক্স কাটিং, সাব-বেজ ও ডাব্লিই ভি এম করে। গত মঙ্গলবার চাঁদখানা মাঝাপাড়া গ্রামের মসজিদের পাড় হতে কার্পেটিং শুরু করলে আজ শুক্রবার গাড়ি চলাচলের সময় দুই দিনের মাথায় সড়কের কার্পেটিং উঠে গেলে এলাকাবাসী শুক্রবার সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে ঠিকাদারের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে ঠিকাদারের লোকজন থানা পুলিশ নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চাঁদখানা মাঝাপাড়া গ্রামের এনামুল হক বলেন, ঠিকাদার সড়কের সাব-বেজ করার সময় নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করলে আমরা বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় তিনি এলাকাবাসীর কথা না শুনে নিম্ন মানের খোয়া দিয়ে কাজ করেছে। একই গ্রামের হায়দার আলী, ফারুক হোসেন, জিকরুল মিয়া, রানা মিয়া সকলেই অভিযোগ করে বলেন, গত মঙ্গলবার কার্পেটিং করার সময় আমরা শিডিউলে উল্লেখিত পাথর ও বিটুমিন দিয়ে কার্পেটিং করতে বলেছিলাম কিন্তু সেখানে তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় ঠিকাদার নিম্নমানের পাথর দিয়ে কাজ করার ফলে কার্পেটিংয়ের দুই দিনেই মধ্যেই তা উঠে গেছে।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফু বলেন, কার্পেটিংয়ে থিকনেছ ২৫ মিলি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার ২৫ মিলির কম দিয়েছে তাই কাপেটিংয়ের দুই দিনের মাথায় তা উঠে গেছে।
এস আই, জেসমিন জয়েন্টভেনচারের প্রোপাইটর ও কাজের ঠিকাদার নওশাদ আলী বলেন, ভাই কাজের ক্ষেত্রে একটু ভুল ত্রুটি হতে পারে সেটি দেখার জন্য এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন তারা বিষয়টি দেখবেন। আপনাকে এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।আপনি যা দেখেছেন লিখতে পারেন।
কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী নইমুল ইসলাম বলেন, কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে সড়কে কার্পেটিং করার সময় বৃষ্টি হওয়ায় কিছু জায়গায় কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী এস এম কেরামত আলী নান্নু বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে কাজে যাতে কোন অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বজলুর রশিদ বলেন, সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে শুনে সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সাথে করে পুলিশ পাঠিয়েছি।
ইত্তেফাকের
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন