জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে উপস্থাপন হতে যাচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। নানা হিসাব-নিকাশ করেই এগোচ্ছে বাজেট নির্ধারণের কাজ। নির্বাচনে জনগণের অনুকূল মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করবে এমন সন্তোষজনক বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা থাকবে। এ কারণে সরকারের শেষ সময়ে এসে জাতীয় এ বাজেটে ভিন্নতা রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে চলমান বড় বড় মেগা প্রকল্প শেষ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এসব প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষ করে বার বার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও পদ্মা সেতু ২০১৮ সালের শুরুতে এসে শেষ করতে পারেনি সরকার। শেষ তো দূরের কথা সহজ অংশে কিছুটা দৃশ্যমান করে পদ্মা সেতুর রূপ প্রদর্শনের চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ পুরো সেতুর কাজ শেষ হবে তা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তাব্যক্তিই।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের রাস্তা নির্মাণের পরেও সম্প্রতি যানজটের ঘটনা জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও রাজধানীর ঢাকার যানজটের চিত্র আরও করুণ। একদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প অপরদিকে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে রাস্তা ও ড্রেন কেটে যখন একাকার, তখন মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঢাকাজুড়েই প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ যানজট। গণপরিবহনে চলাচল করা মানুষের মাঝে দেখা গেছে চাপা ক্ষোভ।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকায় সৃষ্টি হওয়া ব্যাপক জলাবদ্ধতা। এমন দুর্ভোগের ঘটনায় মানুষের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
এসব কারণে মেগা প্রকল্পগুলোতে যাতে অর্থ ছাড়ে কোনো সমস্যা না হয় আগামী বাজেটে সেই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে বলে জানান অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মাদ মুসলিম চৌধুরী।
পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী বছরের বাজেটে তেমন কোনো নতুন বিষয় সংযুক্তি পাচ্ছে না। তবে আমরা মেগা প্রজেক্টগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছি, সেখানে যাতে ফান্ড সর্টেজ না হয়। ফান্ড সর্টেজের কারণে যাতে কাজ আটকে না যায়।’
এবারের বাজেটে ভিন্নতা কিছু থাকছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীও বলেছেন ভিন্নতা কিছু নেই। আমিও বলি সেভাবে ভিন্নতা কিছু নেই। যা আমরা ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি সেটাকে কনসুলেডেট করবো। নতুন পদক্ষেপ নিলেও তা নেক্সটে নিতে পারি।
আসছে জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কার্যক্রম কোন পর্যায়ে- জানতে চাইলে সচিব মোহাম্মাদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, মোটামুটি স্বাভাবিক গতিতেই কাজ চলছে। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায়ই আছে। ফিগারগুলো নিয়ে আমরা ক্রস চেক করছি। কিছু ইস্যুতে নতুন করে যোগ-বিয়োগের কাজ চলছে এখন।
চূড়ান্তভাবে বাজেটের আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সচিব বলেন, মন্ত্রী যেটা বলেছেন এর আগে সেটাই হবে। বাজেটের আকার ধরুণ ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।
কোন কোন খাতে বাজেট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে- জানতে চাইলে মোহাম্মাদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, সেক্ষেত্রে ট্রেডিশনালি ট্রান্সপোর্ট, বিদ্যুৎ ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাজেট বাড়বে। আমরা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছি, আপনারাও দেখেছেন হয়তো। সেখানে এবার যেহেতু ইলেকশন ইয়ার সেহেতু কিছু কিছু এক্সট্রা অরডিনারি মতামত দরকার, সেগুলো আমরা বিবেচনা করবো। বাকি বিষয়গুলো হয়তো এ বছর দরকার হবে না।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা চেম্বার ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা হয়।
সেখানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানান, সব সময় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আকর্ষণীয় রাখা হয়। তবে বর্তমান বাজারে ঋণের সুদের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি হয়ে গেছে। এবারের বাজেটে এটা রিভিউ করা উচিত।
তিনি জানান, এটা এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে তাই এতে বিনিয়োগকারী নিম্ন আয়ের মানুষদের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।
তবে এবারের বাজেটকে রক্ষণশীল বাজেট হিসেবে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ের ভাষ্য অনুযায়ী, তারও এটি শেষ বাজেট বলে জানা গেছে।
বাজেটকে সময়োপযোগী করতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন থেকে নেয়া মতামত বিষয়ে অর্থ বিভাগের সচিব বলেন, এ মতামতগুলো সাধারণত বিজনেস গ্রুপের থাকে বেশি। তা হচ্ছে এনবিআর রিলেডেট। এক্সপেনডিচার রিলেটেড মতামত সিপিডিসহ গবেষণাধর্মী সংগঠনগুলো দেয়। সেগুলো যতদূর পারা যায় ততদূর টেককেয়ার করা হবে।
এদিকে, মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। গেল বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ২৬ কোটি টাকা। তবে এ ব্যয় বাড়তে পারে বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
তাছাড়া মাতারবাড়ী কয়লাভত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পের যেখানে এখনো কাজ বাকি রয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় দেয়া হবে।
জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা-১ এ জমে উঠেছে বাজেট তৈরির কাজ। নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে জীবনের দ্বাদশ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন