বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের শাসন অবস্থায় দেশের প্রতেকটি খাতে উন্নতি হয়েছে। পাট খাতেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দেশের মোট রফতানির ৩ থেকে ৪ ভাগ পাট খাত থেকে আসছে, যা প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বুধবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চোরের হাতে বন্দুক আর গেরস্থের হাতে বন্দুক থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় আওয়ামী সরকার ৪৩০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রেখে গিয়েছিল, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় তা ৩২০০ মেগাওয়াট রেখে গেছে। আর এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এটাই হচ্ছে চোরের হাতে বন্দুক আর গেরস্থের হাতে বন্দুক থাকার মধ্যে পার্থক্য।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে পাট খাতে দূরাবস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে পাটের উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানি বেড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, পাটের উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, কৃষকরা যেন উপযুক্ত দাম পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাটজাত পণ্যের বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, পাটের সাথে আমাদের জাতীয় গৌরব জড়িত। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা উত্থাপনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমার দেশের পাটের টাকায় লাহোর, পাকিস্তানে উন্নয়ন করা যাবে না। তাই, ৭৫ পরবর্তীতে শাসক গোষ্ঠী পাটের উন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ড. মাকসুদুল আলমকে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, আপনার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন, আপনি দেশের পাট খাতের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। এরপর তিনি ৩৩ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে পাট খাতের কার্যক্রম শুরু করেন। তার হাত ধরে পাট খাতে ধীরে ধীরে উন্নতি আসে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মনজুরুল আলম। প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি বলেন, পাট সারা বিশ্বে তুলার পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আঁশ ফসল। বাংলাদেশে প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশের ৪০ থেকে ৪৫ লাখ চাষী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট চাষের সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, ১৯৮০ দশকের শুরুতে দেশে কাঁচা পাটের উৎপাদন ছিল ৬০ থেকে ৬৫ লাখ বেল। ১৯৯০ দশকে তা ৪৪ থেকে ৪৭ লাখ বেলে নেমে আসে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ৭-৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ লাখ বেল পাট উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৪৯টি জাত আবিষ্কার করেছে। তার মধ্যে ২০টি জাত কৃষকরা ব্যবহার করছে। আগে লবণযুক্ত পানিতে পাট উৎপাদন করা যেত না, পাটে পচন ধরত। কিন্তু গবেষকদের প্রচেষ্টায় তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং লবণাক্ত পানিতেও পাট চাষ সম্ভব হয়েছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি আরো বলেন, এক হেক্টর জমির পাট ফসল ১৫ টন কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন অবমুক্ত করে। যা ভুট্টা ব্যতীত অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ভালো করছে তা নিয়ে কোনো বির্তক নেই। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ে আমার ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে খারাপ সময় কেটেছে পাট বীজ আমদানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ ও অনুমোদন দেয়া নিয়ে।
তিনি বলেন, বিএডিসির পাট বীজ উইং প্রয়োজনে বিজেআরআইয়ের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হবে।
তরুণ গবেষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাট খাতের উন্নয়নে কী করণীয় তা নিয়ে আপনারা আলোচনা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন