একটি-দুটি নয়। একে একে প্রতারণার মাধ্যমে চারটি বিয়ে করার অভিযোগ পাওয়া গেছে মাসুক ওয়াহিদ নামে এক যুবকের (৩৬) বিরুদ্ধে। অবশেষে চতুর্থ স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় এখন জেলহাজতে রয়েছে এই যুবক।
সর্বশেষ ফরিদপুরের তরুণী ফাতেমা তুজ জোহরাকে (২৪) বিয়ের পর মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুক চেয়ে এবং মারধর করে জখম করার মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে ফরিদপুর কারাগারে রয়েছেন মাসুক ওয়াহিদ।
ওয়াহিদের গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর পিয়ার শাহাপুর গ্রামে। সেখানে ওয়াহিদের বাবা আব্দুল খালেক এবং মা ফাতেমা খাতুন থাকেন।
এদিকে মামলার পর থেকে ওয়াহিদের আত্মীয়স্বজনরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য জোহরা ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী জোহরা।
ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, গত বছর ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ঢাকায় যান তিনি। সেখানে উত্তরার আমান সিমেন্ট কর্পোরেট শাখায় চাকরির জন্য দরখাস্ত জমা দেন।
এরপর দরখাস্তে দেয়া মোবাইল ফোন নম্বর পেয়ে প্রতারক ওয়াহিদ জোহরার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন ওয়াহিদ।
একপর্যায়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরদৌস ও জোহরার বিয়ে হয়। ফেরদৌস ঢাকার উত্তরার আমান সিমেন্টের ব্রান্ড ম্যানেজার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে এ বিয়ে করেন।
তার আগে ওয়াহিদ নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রথমে রুমা খাতুনকে বিয়ে করেন। তারপর একে একে পারভিন আক্তার ও আফরোজা বেগমকে বিয়ে করেন।
সর্বশেষ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রতারণার মাধ্যমে জোহরাকে বিয়ে করেন ওয়াহিদ। বিয়ের পর জোহরাকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর রাজিয়া সুলতানা সড়কের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাট বাড়িতে ওঠেন ওয়াহিদ। মাঝেমধ্যে জোহরাকে ফরিপুরের বাড়িতে রেখে যান।
একপর্যায়ে অফিসের কাজ আছে বলে রাতে ওয়াহিদ বাড়িতে না এলে তার স্ত্রীর সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে স্ত্রী জোহরা জানতে পারেন তার স্বামী ওয়াহিদ আগে আরও ৩টি বিয়ে করেছেন।
তারপরও পারিবারিক মানসম্মানের কথা চিন্তা করে জোহরা নীরবে তা সহ্য করে চলেন এবং তার পরিবারকে কিছু জানাননি। একপর্যায়ে স্বামী ওয়াহিদের শুরু হয় প্রতারণার কৌশল।
ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য জোহরার বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এনে দিতে বলেন। এরপর জোহরাকে টাকার জন্য ফরিদপুরের নগরকান্দার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ওয়াহিদ।
ঢাকার বাড়িতে জোহরার সোনা-গয়নাসহ টিভি-ফ্রিজ এবং কাপড়চোপড় কৌশলে রেখে ফরিদপুর পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জোহরা বাবার বাড়িতে থাকা অবস্থায় স্বামী ওয়াহিদ ফরিদপুরে এসে টাকার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে তাকে মারপিট করে আহত করে রাতে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান ওয়াহিদ।
পরে জোহরাকে আহত অবস্থায় বাড়ির লোকজন উদ্ধার করে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় জোহরা বাদী হয়ে স্বামী ওয়াহিদের বিরুদ্ধে নগরকান্দা থানায় গত ৫ মে যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে ওয়াহিদকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে ১১ মে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর ফরিদপুর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলায় ওয়াহিদ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তার বাবা আব্দুল খালেক ও মা ফাতেমা বেগমকে। কারণ বিয়ের সময় তার মা-বাবা বিষয়টি জানতে পেরেও এ বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার পর স্বামী ওয়াহিদ গ্রেফতার হলে জোহরা ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান জোহরা।
জোহরা বলেন, আমার মা-বাবার অনেক ইচ্ছে ছিল আমি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হব। কিন্তু এই লম্পটের জন্য আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেল। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর যাতে এমন লম্পট-প্রতারকরা কোনো মেয়ের জীবন ধ্বংস করতে না পারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার এসআই অতুল জোয়াদ্দার জানান, মামলার পর মাসুক ওয়াহিদকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার এক বাসা থেকে গ্রেফতার করে ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে ওয়াহিদ জেলহাজতে রয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন