প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের দায়িত্বে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থাকলেও চার বছরে তাকে কোনো দায়িত্ব বা ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। এমনটাই দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
অথচ পদের কারণে প্রটোকলসহ প্রতি মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা সরকার তার পেছনে ব্যয় করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডি ২৭-এ টিআইবি মেঘমালা কনফারেন্স রুমে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ দশম জাতীয় সংসদ চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৭)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অবশ্য বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্বের সরকারি গেজেট প্রকাশ হয়নি বা কোনো দাপ্তরিক নির্দেশনাও পাওয়া যায়নি। বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্বের ব্যাপারে এরশাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার দায়িত্ব হচ্ছে আধুনিক মুসলিম প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া এবং মধ্যপ্রচ্যে জনশক্তি রফতানির বাজার প্রসারে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করা।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশেষ দূত হিসেবে সরকারি প্রটোকল (নিরাপত্তা, গাড়ি, সচিব ইত্যাদি) পাচ্ছেন। একই সাথে মন্ত্রীর পদমর্যাদার সমতুল্য বিশেষ ভাতা ও অন্যান্য খাত বাবদ (স্বাস্থ্যসেবা, ইন্সুরেন্স, বিদেশ ভ্রমণ, টেলিফোন বিল) ইত্যাদি বাবদ প্রতি মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা সরকারের ব্যয় হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা সত্ত্বেও গত চার বছরে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে ব্যক্তিগত সফর করলেও বিশেষ দূত হিসেবে কোনো ভূমিকা তাকে পালন করতে দেখা যায়নি।’
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এরশাদ সংসদে মোট ১৮টি অধিবেশনে ৩২৭ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৭৯ দিন উপস্থিত ছিলেন। যা সংসদ উপস্থিতির গড় মাত্র ২৪ শতাংশ। তবে সংসদে তার কার্যকর ভূমিকা না থাকলেও সরকারের বিভিন্ন কাজে দৃশ্যত কঠোর সমালোচনা করতে দেখা গেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা ও আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে দলীয় ফোরামে এবং জনসভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তবে সংসদে জোরালো ভূমিকার ঘাটতি থাকলেও সংসদে দলের আত্মপরিচয় সংকটে বক্তব্য দেন।
এরশাদ সংসদে বলেন, ‘জাপা নেতিবাচক রাজনীতি করে না। আমরা সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরপরও মন্ত্রিসভায় আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করা হয়। আমাদের নিয়ে হাসবেন না। তাহলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্রুপ করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের কোনো প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি। অনেক চেষ্টা করেছি, সরকারি কোনো মহল থেকে এরশাদের প্রজ্ঞাপনের কোনো বিষয় জানতে পারিনি। তবে এরশাদ গণমাধ্যমকে যেটা বলেছেন, এটাই আমাদের কাছে তথ্য। তাছাড়া এ সংশ্লিষ্ট কোনো ডকুমেন্ট অনেক চেষ্টা করেও পাইনি।
তিনি বলেন, ‘তাকে বিশেষ দূত হিসাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এটা সেকেন্ডারি এবং বিশ্বস্ত সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছি। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও কোনো তথ্য দেয়নি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন