রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বিরামহীন কাজ করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। নগরবাসীর স্বস্তির জন্য তিনি এই উদ্যোগ নিলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না।অবশ্য মেয়র বলছেন, গত রমজানের তুলনায় এবার পণ্যের দাম কম। কিন্তু, অন্য মাসের তুলনায় কিছুটা বাড়তি।
রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে গত ৮ মে নগর ভবনে এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মেয়র সাঈদ খোকন।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন, রমজানে সয়াবিন তেলসহ কোনো প্রকার ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে না। চিনি, ছোলা, ডাল, আটা, ময়দা ও সুজির দাম স্বাভাবিক থাকবে। খুচরা বাজারে কেউ দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা।
এরপর ১৪ মে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেন মেয়র। গত রমজানের তুলনায় এবার ২৫ টাকা কমিয়ে দেশি গরুর মাংস প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হয় ৪৫০ টাকা এবং বোল্ডার বা বিদেশি গরুর মাংস ২০ টাকা কমিয়ে ৪২০ টাকা।
একইভাবে খাসির মাংস প্রতি কেজি ৭২০ টাকা, মহিষের মাংস ২০ টাকা কমিয়ে ৪২০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগির মাংস ২০ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ওই সভায় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা মেয়রকে জানান, কোনোভাবেই দাম বাড়বে না।
শুধু ঘোষণা দিয়েই বসে থাকেননি। এরপর গত ১৭ মে রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজার পরিদর্শন করেন মেয়র সাঈদ খোকন।
সে সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫টি অঞ্চলে ৫টি টিম কাজ করবে।
এরপর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী, মুদি ব্যবসায়ী ও হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। সে সময় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও ভেজাল খাদ্য সরবরাহ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আসে।
তবে কারা মেয়রের এই নির্দেশ মানছেন। আর কারা মানছেন না এ বিষয়ে নগর ভবন থেকে কোনো মনিটরিং করা হচ্ছে কিনা তা জানা যায়নি।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজার, শান্তিনগর ও সেগুন বাগিচা বাজার ঘুরে জানা গেছে, রমজানের শুরুতে ইফতারি পণ্যের যে দাম ছিল, তা এখনো আছে। তবে সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত রমজানের চেয়ে এবার দাম কম। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।
মালিবাগ বাজারের ক্রেতা ছাত্তার আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে ইফতারি পণ্যের দাম এখনো চড়া।’
কিছুটা ভিন্ন কথা বলেন স্বপ্না নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘দাম আগের মতোই আছে। বেগুনের দাম কমতির দিকে।’
সবজি বিক্রেতা বিপ্লব মৃধা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘প্রথম রমজানে দাম কিছুটা বেশি ছিল। এখন দাম কমেছে। বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে দাম বাড়বে।’
মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী বাদল জানান, গত বছর ছোলার কেজি ছিল ৯০ টাকা। এবার ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। একইভাবে চিনি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা, মসুর ডাল (দেশি) ৯০ টাকা, (বিদেশি) ৬০ টাকা, আটা ৩৩ টাকা, ময়দা ৪৫ টাকা, সয়াবিন তেল (খোলা) ৯০ টাকা লিটার, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১ লিটার ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, ৫ লিটার ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মেয়রের পদক্ষেপ এবং বাস্তবে বাজারের হাল বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য মেয়র নিজে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ট্রারিফ কমিশন ও ভোক্তা অধিকার ফোরামকে সহযোগিতা করছি।
মাংসের নির্ধারিত দর তো মানা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাজারে ধরা-বাধা কিছু করা যায় না। এই দামেই বিক্রি করতে হবে, তাও বলা যায় না। কিছু ব্যবসায়ী থাকেন, লোভ করে লাভ করেন। এটা ধর্মীয় নৈতিকতার বিষয়। এজন্য আমরা বিভিন্ন মসজিদের মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।’
তবে খান মোহাম্মদ বিলাল স্বীকার করেন, সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি না হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হইনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন