নগদ প্রায় ১২ হাজার টাকা, দামি মোবাইল এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ টাঙ্গাইল শহরে ব্যাগ হারান এক গৃহিনী। রোববার দুপুরে তিনি বিদ্যালয় ছুটির পর বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পরে হারানো মোবাইলের নাম্বারে ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে বলে ওঠে ‘স্যার আমি আপনার জিনিসপত্র রাস্তায় পেয়েছি। এখন সাবালিয়া এলাকায় আছি। আমি গরিব মানুষ স্যার, পেটের দুঃখে রিকশা চালাই। যদি একটু কষ্ট করে এসে আপনার জিনিসগুলো নিয়ে যান।’
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়ার চড়ের আশরাফ মুন্সির ছেলে ঠান্ডু মিয়া (৫৫)।বর্তমানে থাকেন শহরের বেরাডোমা এলাকায়।
হাতেখড়ি প্রি-প্রাইমারি স্কুলের পরিচালক নওশাদ রানা সানভী এ তথ্যগুলো জানান।
তিনি বলেন, রোববার দুপুরে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে টাকা, মোবাইল ফোন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ ভ্যানেটি ব্যাগ রাস্তায় ফেলে যান। পরে বাসার সামনে গেলে ওই অভিভাবকের তা স্মরণ হয়। তাৎক্ষণিক তিনি স্কুলে আসেন এবং বিষয়টি শিক্ষকদের জানান।
পরে আমি ওই অভিভাবকের হারানো ফোনে কল দেই। এ সময় ফোন রিসিভ করে অপরপ্রান্ত থেকে বলে ওঠেন ‘স্যার আমি আপনার জিনিসপত্র রাস্তায় পেয়েছি। এখন সাবালিয়া এলাকায় আছি। আমি গরিব মানুষ স্যার পেটের দুঃখে রিকশা চালাই। যদি একটু কষ্ট করে এসে আপনার জিনিসগুলো নিয়ে যান।’
নওশাদ রানা সানভী বলেন, ‘আমি তাৎক্ষনিক ছুটে যাই তার কাছে। সেখানে বয়স্ক একজন লোককে একহাতে রিকশার হাতল আরেক হাতে ভ্যানেটি ব্যাগটি ধরে অপেক্ষা করতে দেখতে পাই। কাছে যেতেই তিনি বলেন, “স্যার আপনার জিনিস বুইজা নেন”। ব্যাগটি হাতে পেয়ে চেন খুলে দেখা যায় সকল কিছুই রয়েছে। তখন আমি তাকে কিছু নগদ পুরস্কার দেয়ার চেষ্টা করি।’
কিন্তু এ সময় তিনি আরো অবাক করলেন বলে জানান নওশাদ। ঠান্ডু মিয়া বলেন, “স্যার আপনার জিনিস আপনি পাইছেন। আমি দায়মুক্ত হলাম। আমার জন্য কিছু করতে হবে না।” তখন আমি এই মহত মানুষটির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কয়কটি ছবি তুলে সেখান থেকে চলে আসি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাব ও দারিদ্রতা তার নিত্য সঙ্গী, তবুও তিনি তার নীতি আদর্শ থেকে একচুল নড়েন নি। আদর্শ ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের বর্তমান সমাজে দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত একজন মানুষ যখন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, তা সত্যিই আশা জাগায় আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায়।
স্কুলের ওই পরিচালক বলেন, বর্তমান যুগে তার এমন মানবতা সতিই প্রশংসনীয়। আশ্চর্য ও মুগ্ধ হওয়ার মতো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন