গাজীপুরের টঙ্গীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রেজাউল ইসলাম ওরফে রনির (২৮) কাছ থেকে টাকা নিয়েও পুলিশ তাকে ক্রস ফায়ারে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের মা পারভীন বেগম। এ ব্যাপারে পুলিশের দাবি, রনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। তবে এলাকাবাসী বলছে, রনি একসময় পুলিশের সোর্স ছিলেন।
জানা যায়, রেজাউল ওরফে রনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকার ৩ নম্বর ব্লকের হাফিজুল ইসলামের ছেলে।
নিহত রেজাউলের মা পারভীন বেগম বলেন, ‘গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে টঙ্গী এরশাদ নগরের বটতলা এলাকা থেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রেজাউলকে তুলে নিয়ে যায়। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে রনিকে খুঁজতে গাজীপুর শহরের ডিবি কার্যালয়ে যাই। সেসময় একটি সাদা কাগজে আমার সই নেওয়া হয় এবং তিন লাখ টাকা রেখে রেজাউলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।’
এ ব্যাপারে পারভীন বেগম আরও বলেন, ‘ডিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর পুলিশের মূল কার্যালয়ের সামনে থেকে টঙ্গী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক রেজাউলকে আবারও আটক করেন। তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে টঙ্গী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে পুলিশ সেখানেও টাকা দাবি করে। সোমবার সকালে রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার বাবা থানা পুলিশকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে আসার পর আমরা জানতে পারি ছেলে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। তারা আমাদের কাছে টাকাও নিয়েছে, আবার ছেলেকেও ক্রসফায়ারে দিয়েছে।’
তবে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘রেজাউল ইসলাম ওরফে রনি একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে ১৪টি মামলা রয়েছে। রবিবার রাতে মাদক বিরোধী অভিযানে এরশাদ নগর এলাকা থেকে রেজাউলকে আটক করা হয়। আরও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে তাকে সঙ্গে নিয়ে টঙ্গীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযানে নামে পুলিশ। ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী রাত সোয়া ৩টায় রেজাউলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এরই এক পর্যায়ে রেজাউল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এসময় পুলিশের দুই কর্মকর্তাও আহত হন।’
নিহত রেজাউল ওরফে রনির ব্যাপারে স্থানীয়রা বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, রেজাউল মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবী। আবার অনেকে বলছেন, ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে এলাকায় রেজাউলের পরিচিতি রয়েছে।
এ ব্যাপারে টঙ্গী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসানুজ্জামান জানান, ‘রেজাউলের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মাদক মামলা এবং ৪টি হত্যা মামলা।’
নিহত রেজাউলের মায়ের অভিযোগের ব্যাপারে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমীর হোসেন বলেন, ‘রেজাউলকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেনি। আর সে কারণে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া বা কাগজে সই নেওয়ার ঘটনা ঠিক নয়। তাকে বেশ কিছুদিন আগে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছিল। সে কারণে পুলিশের প্রতি তার পরিবারের একটা ক্ষোভ রয়েছে। সেজন্য তারা উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন, আবার বলছে, সে নাকি পুলিশের সোর্সও ছিল।’
টাকা নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে টঙ্গী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রেজাউল বিভিন্ন মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। তাকে টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকা থেকে রবিবার রাত ১০টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে তথ্য পাই- টঙ্গীর নিমতলী এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে। তাদের মূল হোতাকে ধরতে গেলে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে রেজাউল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এখন তো তার পরিবার সাজিয়ে-গুছিয়ে কত কথাই বলবে, এসব মিথ্যা।
পাঠক মন্তব্য
politekal krim
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন