কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ১৬ জুলাই একটি কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করে কমিশন। কিন্তু সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী একটি কাজও সময়মতো করতে পারেনি তারা। বরং রোডম্যাপের বাইরের হুট করে উদয় হওয়া বাড়তি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসির রোডম্যাপে ছিল-
১. চলতি বছরের ফেব্রয়ারির মধ্যে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা,
২. গত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে সুপারিশমালা চূড়ান্ত করা,
৩. ডিসেম্বর ২০১৭-এর মধ্যে সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা,
৪. চলতি বছরের জুনের মধ্যে ৩০০ আসনের নির্বাচনী এলাকার জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রণয়ন ও বিতরণ করা,
৫. চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার উপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তিকরণ এবং ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে কমিশনের অনুমোদন গ্রহণপূর্বক ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা,
৬. চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বহাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মার্চের মধ্যে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা, এবং
৭. ভোটগ্রহণের আগে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম সম্পন্ন করা।
এই সাতটি বিষয়ের যেগুলোর সময়সীমা পাড় হয়ে গেছে। তার একটিও সময়মতো সম্পন্ন করতে পারেনি ইসি। শুধুমাত্র নির্ধারিত সময়ের চার মাস পর ৩০০ আসনের সীমানা পুসঃনির্ধারণ করে গেজেট করতে পেরেছে কমিশন। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে না পারলেও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানায়। কমিশন এখন ব্যস্ত সেই দাবি পূরণে গবেষণার কাজে।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুযোগ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। সোমবারও আচরণবিধি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলাকার সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়ার বিধান রেখে আচরণবিধি সংশোধনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুযোগ দেওয়া হলে কি সুবিধা বা অসুবিধা হয়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিন্তা করতে বলা হয়েছে বৈঠকে।
সূত্র আরো জানায়, বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। কারণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের কাজ চলছে। সেটি সংশোধন করা হলে আচরণবিধিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু আরপিও সংশোধন না করে আগেই সিটি করপোরেশনের আচরণ বিধিমালায় হাত দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া সিটি করপোরেশনে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় সরকারের বাকি নির্বাচনগুলোতেও সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে সেটি অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। কমিশন পড়বে বিপাকে।
আরপিও ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার ও আইন সংস্কার কমিটির সভাপতি কবিতা খানম বলেন, আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা শেষ হোক। আমরা আরপিও এবং আচরণ বিধিমালা একসঙ্গে করবো। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সরকারি দল থেকে যা বলছে কমিশন সেটাতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর বাকিদের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল খুলনা রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পরে তাকে সহায়তার জন্য যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজনকে খুলনায় পাঠানো হয়, যা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে। কমিশনের এ ভূমিকা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। কমিশনের ভূমিকায় আমরা সন্তুষ্ট না।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন