জমি লিখে না দেয়ায় মাকে ছেলের নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল
23 May, 2018
ঘটনার চার দিন। বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি কুলঙ্গার দুই সন্তান। ভিটেমাটি লিখে না দেয়ায় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে সন্তানেরা। মাকে নির্যাতনের ওই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
এই ঘটনায় বৃদ্ধা নিজে বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন দুই ছেলে আবদুর রহমান ও হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বৃদ্ধা মা এক ছেলের নির্যাতনের পর মাটি থেকে কোনোভাবে উঠে বসে আর্তনাদ করছেন। আর পাষণ্ড ছেলে মায়ের গলা টিপে এবং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বাসায় চলে যাচ্ছে।
হাতিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি চার দিন আগে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধা নিজে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, থানায় অভিযোগ হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্তরা। তবে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া এদের খবর নিতে বিভিন্ন স্থানে সোর্স কাজ করছে বলেও জানান ওসি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, বৃদ্ধা তার এক মেয়ের সঙ্গে থাকেন। মেয়ের কথা মতোই উনি চলেন। এটা অন্য সন্তানেরা ভালোভাবে নিচ্ছে না। যার কারণে এই সমস্যা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধার সেজ মেয়ে শাহেদা আক্তার মুক্তা জানান, শুধু এবারই নয় এভাবে প্রায় সময় ছোটভাই বাবু ও তার স্ত্রী ঠুনকো অজুহাতে মাকে পিটিয়ে আহত করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপরও হামলে পড়েন।
তিনি বলেন, মাকে নির্যাতন থেকে রক্ষায় স্থানীয় পৌরসভার মেয়রের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি। সেখানে কোনো বিচার পাইনি। উল্টো মায়ের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। তাই নিরুপায় হয়ে এবার নির্যাতনের পর মা থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চরকৈলাশ ওছখালী হাতিয়া আনোয়ারা কেজি স্কুলের কাছেই মৃত সিরাজ উদ্দিনের বাড়ি। মৃত্যুকালের তিনি স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও চার মেয়ে রেখে যান।
এর মধ্যে বড় ছেলে আবদুর রহমান ও তার স্ত্রী উপজেলার গামছা খালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বাড়ির ভিটেমাটি ও আর বাইরে কিছু জমি রয়েছে। ওই জমিতে যে ফসল পাওযা যায় তা দিয়েই বৃদ্ধার জীবিকা চলে।
তবে মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানা ভিটেমাটি ও জমিটুকু লিখে দেয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে নির্যাতন করে যাচ্ছে বড় ছেলে আবদুর রহমান ও ছোট ছেলে হারুন অর রশিদ। আবদুর রহমানের স্ত্রী, হারুনের স্ত্রী ও কন্যা রাজিয়া ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধাকে ভিটেচ্যুত করতে।
শাহিদা বেগম মুক্তার অভিযোগ, থানায় অভিযোগ করেও যেন নিস্তার নেই। তারা পারছে না এই মুহূর্তে মাকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। স্থানীয় পৌরসভার মেয়র একেএম ইউসুফ তাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থা এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
হাতিয়া পৌরসভার মেয়র একেএম ইউসুফ বলেন, না, আমি এই বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আইনগতভাবেই ব্যবস্তা নিবে। এখানে হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন