রাজধানীর গুলশান এলাকায় এক ইতালীয় নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গুলশান থানা-পুলিশ ২০ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ আদালতকে বলেছে, আটক যুবককে ওই ইতালীয় নাগরিক শনাক্ত করেছেন।
অভিযুক্ত আসামির নাম মাসুম ওরফে আবদুল গাফফার ওরফে মাসুদ। এখন তিনি কারাগারে আছেন। ৭ মে গুলশান এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানা গেছে আজ বৃহস্পতিবার। ভুক্তভোগী ইতালীয় ওই নারী উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
পুলিশ বলছে, ঘটনার দিন মাসুম ওই ফ্ল্যাটের চতুর্থ তলার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকেন। পরে ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকেরা জড়ো হলে মাসুম কাটা গ্রিল দিয়ে বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময় ইতালীয় ওই নারীর ঘর থেকে নেওয়া ব্যাগ ফেলে যান। তবে একটি সানগ্লাস ও ইয়ারফোন নিয়ে যান। পুলিশের দাবি, মাসুম একজন পেশাদার চোর।
ইতালীয় নাগরিক তাঁর মামলার এজাহারে বলছেন, ৬ মে অফিস থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে। রাত নয়টার দিকে রাতের খাবার খাওয়ার পর নিজের শয়নকক্ষে যান রাত ১০টায়। এরপর থেকে বাসার ভেতর থেকে অস্পষ্ট আওয়াজ শুনতে পান তিনি। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন না কোথা থেকে এই শব্দ আসছে? শব্দ কোথা থেকে আসছে, তা দেখার জন্য তিনি রান্নাঘরসহ ফ্ল্যাটের অন্য কক্ষেও যান। কিন্তু কাউকে তখন দেখতে পাননি। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।
ইতালীয় ওই নারী বলছেন, রাত একটার দিকে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। শয়নকক্ষে দেখতে পান অজ্ঞাত এক পুরুষকে। ওই পুরুষই তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
ওই যুবক দেখতে কেমন ছিলেন, সেই বর্ণনাও দিয়েছেন ইতালীয় ওই নারী। ওই নারীর ভাষ্য, ওই যুবকের মুখ ছিল ক্লিন শেভড। চুলের রং কালো। পরনে ছিল শার্ট আর প্যান্ট।
এজাহারে বলা হয়, সেদিন যুবককে শয়নকক্ষে দেখার পর তিনি চিৎকার দেন। কিন্তু তিনি যাতে চিৎকার করতে না পারেন, সে জন্য যুবক তাঁর মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেছিলেন। এরপর যুবকের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর হাত রক্তাক্ত হয়। এ সময় যুবকটি তাঁকে হত্যারও হুমকি দেন। একপর্যায়ে যুবককে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে তিনি শয়নকক্ষ থেকে বের হতে সক্ষম হন। পরে চিৎকার শুনে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এগিয়ে আসে। খবর দেওয়ার মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে গুলশান থানা-পুলিশ। ততক্ষণে অজ্ঞাত যুবক ওই বাসা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বাসা থেকে নারীর ব্যাগ নেওয়া হলেও তা গ্রিলের কাছে ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত যুবক। তবে ওই নারীর সানগ্লাস ও হেডফোন চুরি করে নেওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর ৭ মে ওই নারী বাদী হয়ে গুলশান থানায় ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
ইতালীয় ওই নারীকে ধর্ষণচেষ্টার এই মামলায় ১১ মে গ্রেপ্তার করা হয় মাসুম ওরফে আবদুল গাফফারকে। পরদিন ১২ মে আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন বাসার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে সন্দেহভাজন আসামির ছবি পর্যালোচনা করা হয়। এর ভিত্তিতে আসামি মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি একজন পেশাদার গ্রিল কাটা চোর। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। গুলশানের ডিপ্লোমেটিক এলাকায় ঢুকে একজন বিদেশি নারীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আদালত আসামি মাসুমকে দুই দিন পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
আদালত তাঁর আদেশে বলেছেন, মামলার কেস ডকেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ‘আসামি গুলশান ডিপ্লোমেটিক এলাকার ভেতরে প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে মর্মে বাদী আসামিকে শনাক্ত করেছেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহউদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে বলছেন, খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা দেখেন, ওই যুবক বাসার গ্রিল কেটে জানাল দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। ঘটনার পরপরই তিনি ওই জানালা দিয়েই বেরিয়ে যান। আসামি মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয় বাড্ডা এলাকা থেকেই। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। আসামি পেশাদার গ্রিল কাটা চোর।’
ইতালীয় ওই নারীর মামলার তদন্ত শেষে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন মিয়া। আদালতে পুলিশ এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, আসামি মাসুম বলেছিলেন, তাঁর বাড়ি বাগেরহাটে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাঁর বাড়ি পিরোজপুরে। আসামি একজন ভবঘুরে। একজন পেশাদার অপরাধী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন