নিচের এই লিঙ্কটিতে প্রবীন সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারের তৈল মর্দন জাতীয় একটি বক্তব্য রয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব আগে সেটা শুনবেন। তারপর আমার লেখাটা পাঠ শুরু করবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=w-0vbqczrcE&feature=youtu.be
তেলবাজ সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে নিয়ে ২০১৩ সালের ৩ জুন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। গতকাল দখলদার প্রধানমন্ত্রী’র সংবাদ সম্মেলনে গোলাম সারোয়ারের তেল ঢালা দেখে প্রতিবেদনটি আবারো পাঠকের সামনে উপস্থাপনের আগ্রহ তৈরি হয়। তাই আবার এটি আমার ওয়েবসাইটে দিলাম।
৩ জুন ২০১৩ প্রকাশ
সমকাল সম্পাদকের বিশেষ নিবন্ধ ‘কৈপিয়ত’ নয়, শাপলা চত্তরের দুবৃত্ত ও আমার দেশের অপসাংবাদিকতা !
অলিউল্লাহ নোমান
গত ২৪ মে দৈনক সমকাল পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘কৈপিয়ত নয়’, শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক গোলাম সারোয়ার। প্রবীন এ সম্পাদকের স্বনামে লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। এটি দেখেই অত্যন্ত মনযোগের সাথে পাঠ করলাম। তাঁর মত প্রবীন সম্পদাকের লেখা দেখলে-ই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। কারন প্রবীনদের নিকট থেকে শেখার ও জানার রয়েছে অনেক কিছু। প্রবীনদের লেখা থেকে অহর্নিশ শেখা ও জানার চেষ্টা থাকে আমার। পেশায় আমি নবীন। নিজেকে একজন খবরের টোকাই হিসাবে সব সময় মনে করি। টোকাইরা সারা দিন এখানে সেখানে ঘুরে ময়লা আবর্জনা থেকে জিবীকা আহরনের চেস্টা করে। টোকাইদের জীবন ময়লা আবর্জনা নির্ভর। রিপোর্টার হিসাবে আমিও একনজন খবরের টোকাই। খবরের সন্ধানের মধ্যেই আমার পরিবারের জীবিকা দিয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন। সারা দিন ঘুরে একটি খবর সংগ্রহের অনন্ত চেস্টা থাকে। অনুসন্ধানী রিপোর্টার হিসাবে খবরের সন্ধানে দেশে বিভিন্ন প্রান্তেও যেতে হয়েছে। একটি খবরের সন্ধানে আমাকে লন্ডন পর্যন্ত সফর করতে হয়েছিল গত বছরের জুলাই মাসে। আরেকটি খবর সংগ্রহের পর অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে প্রকাশের অপেক্ষায় চাপা উত্তেজনায় কেটেছিল কয়েকটি দিন। শেষ পর্যন্ত খবরটি প্রকাশ হয় দৈনিক আমার দেশ-এ। জনাব মাহমুদুর রহমানের মত একজন সাহসী,দেশ প্রেমিক ও সত্যসন্ধানী সম্পাদকের কারনেই মূলত: এটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়। নতুবা এই সংবাদটি প্রকাশ করার আপসোস নিয়ে হয়ত: আমাকে আজীবন কাটাতে হতো। এই সংবাদটি প্রকাশের কয়েক দিনের মাথায় দেশ ছাড়তে হয়েছে। এখন অনির্দিস্ট কালের জন্য লন্ডনে সরকারি আশ্রয়ে রয়েছি। সুতরাং টোকাই এবং সংবাদপত্রের রিপোর্টারের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। টোকাইরা তাঁর অবস্থানে অনুযায়ী আবর্জনা থেকে পন্য সংগ্রহের চেস্টা চালায়। আর সংবাদ কর্মী হিসাবে আমি নানা জায়গা থেকে সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত জীবন কাটাই। পার্থক্য শুধু অবস্থানগত। একজন সংবাদকর্মী হিসাবে প্রবীনদের লেখা থেকেও অনেক কিছুই সংগ্রহ করার থাকে।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের প্রতি আমার বিন¤্র শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয় ‘কেপিয়ত নয়’, লেখাটি পড়ে হতাশ হয়েছি। শিখেছি তাদের মত করে একপেশে সংবাদ প্রকাশ না করলে কিভাবে আক্রমনের শিকার হতে হয়। পুরো লেখাটি জুড়ে দৈনিক আমার দেশ ও আমার দেশ-এর নন্দিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রতি বিষোদগার করা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, পত্রিকাটির ছাপাখানা খুলে দেয়া এবং বন্ধ করে দেয়া দু’টি টেলিভিশন চ্যানেল প্রচারের বাঁধা তুলে নেয়ার দাবী জানিয়ে ১৫ সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতিতে জনাব গোলাম সারোয়ারের সাক্ষর রয়েছে। তাঁর সাক্ষর দেয়ার বিষয়টি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ‘কৈপিয়ত’ নয়, শিরোনামে মন্তব্য প্রতিবেদনটি লেখা। তাঁকে সাধুবাদ জানাই তিনি এই বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন। আমার দেশের একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসাবে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
জনাব গোলাম সারোয়ার বিবৃতিতে সাক্ষর করলেও ব্যাখ্যা করেছেন বিষয়টি। তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থার কথাও লিখেছেন। লিখেছেণ তাঁর চেতনার কথা। শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি দৃঢ় অবস্থানের কথাও জানিয়েছেন মন্তব্য প্রতিবেদনে। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে সাংবাদিকতা এবং সম্পাদক হতে পারবেন। কিন্তু আরেকজন দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ ধারণ করে সাংবাদিক বা সম্পাদক হতে পারবে না এটাই বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর লেখায়। বাংলাদেশের গণ মানুষের কাছে নন্দিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ‘হঠাৎ সম্পাদক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। জনাব মাহমুদুর রহমানের সম্পাদক হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও তিনি লিখেছেন। তাঁর লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে মাহমুদুর রহমান একটি বিশেষ মিশন নিয়ে সংবাদ পত্রের সম্পাদক হয়েছেন। তাঁর লেখার একটি অংশ বিশেষ পাঠকের সামনে তুলে ধরছি। এতে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে। লেখাটির একজায়গায় তিনি বলেছেন-‘আমার দেশ সাংবাদিকতার নীতিমালা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে দিনের পর দিন সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতার নিন্দনীয় পথ অনুসরণ করেছে। মিথ্যা প্রচারে দেশ জুড়ে উম্মাদনা সৃস্টি করেছে। মাহমুদুর রহমান তাঁর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের ছবিসহ যে লেখা প্রতিদিন লিখেছেন, তাতেও সাংবাদিকতার নীতিমালা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করা হয়েছে। সত্যের অপলাপ করা হয়েছে। কখনো তিনি নোংরা ভাষাও ব্যবহার করেছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে খারাপ ভাষায় তাঁর পত্রিকায় বিষোদগার করেছেণ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানে যথেচ্ছাচার, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার নয়।’ মাহমুদুর রহমানকে হঠাৎ সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করে তাঁর লেখায় বলা হয়েছে-‘হঠাৎ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সংবাদিকতার নীতিমালা, স্বাধীনতা, দায়বদ্ধতা জানার প্রয়োজন নেই।’ তাঁর লেখাটিতে আরো বলা হয়েছে-‘বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁর সম্পাদক হিসাবে আবির্ভাব। আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে তিনি তাঁর উপর অর্পিত মিশনই পালন করছেণ। উল্লেখিত নানা কারনে আমার দেশ-এর ডিক্লারেশণ বাতিল করা যেত।’
দৈনিক আমার দেশ ও নন্দিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রসঙ্গে গোলাম সারোয়ারের লেখা থেকে অশং বিশেষ উপরে উল্লেখ করা হল। গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি এই বিশেষ নিবন্ধে লিখেছেন-‘শাপলা চত্তরে হেয়াজতের তান্ডবের বিস্তারিত সংবাদ, বিশেষ করে গভীর রাতে শাপলা চত্তর দুবৃত্তমুক্ত করতে বিশেষ অভিযানের বিষদ বিবরণ ও ছবি একমাত্র সমকালই ছেপেছে।’
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের লেখা নিয়ে সমালোচনা করার সাহস ও হিম্মম আমার নেই। আগেই উল্লেখ করেছি সংবাদ কর্মী হিসাবে আমি একজন টোকাই। সব সময় জানা ও শেখার চেস্টা করি। টোকাইদের মত সংবাদ খুজে বেড়াই। শ্রদ্ধেয় গোলাম সারোয়ারের লেখা থেকে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে। এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর আমি তাঁর লেখায় পাইনি। পাঠকের সামনে প্রশ্ন গুলো উপস্থাপন করছি।
(ক) গোলাম সারোয়ার তাঁর লেখায় বলেছেন আমার দেশ সংবাদিকতার নীমিতালা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে দিনের পর দিন সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতার নিন্দনীয় পথ অনুসরণ করেছে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে আমার দেশের কোন সংবাদটি সংবাদিকার নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকাশ করা হয়নি সেই বিষয়ে একটি উদাহরণও নেই। সবিনয়ে জনাব গোলাম সারোয়ারের কাছে জানতে চাইবো কোন সংবাদটি সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রকাশ করা হয়েছে সেটা বলবেন কী? আপনার কাছ থেকে একজন টোকাই সংবাদকর্মী হিসাবে সেটা জানতে চাই। ভবিষ্যত জীবনে সেটা কাজে লাগানোর চেস্টা করবো।
জনাব গোলাম সারোয়ারের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে শাহবাগের তথা কথিত ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ হচ্ছে ইতিহাসের বিষ্ময়কর ঘটনা। তিনি তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা সমকালে শাহবাগের সংবাদ প্রতিদিন বিশেষ চার পৃষ্ঠা জুড়ে প্রকাশ করতেন বলে গর্ববোধ করেছেন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় সমকালের মত শাহবাগ নিয়ে দালালি করেনি বলেই কী সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে! শাহবাগের তথাকথিত আন্দোলনের নামে বেহায়াপনা কাদের টাকায় ও ইন্দনে চলেছে তা ভারতীয় পত্র পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের টাইমস্্ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমার দেশ ছেপেছে। পাক্ষিক দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমার দেশ জাতিকে অবহিত করেছে। এতেই স্পস্ট গণজাগরণ মঞ্চের আসল উদ্দেশ্য। এই গণজাগরণ মঞ্চের নির্লজ্জ দালালীতেই বোঝা যায় সমকাল সম্পাদক কাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করছেন। আমার দেশ সেই বিষয় গুলো তুলে ধরার কারনেই হয়ত:বা তাঁর গায়ে এতজ্বালা! আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, শাহবাগ নিয়ে দৈনিক আমার দেশই একমাত্র সংবাদপত্র যেখানে সত্য অনুসন্ধান করে প্রকাশ করেছে। কারন শাহবাগের তথা কথিত আন্দোলনের নেতাদের একজন ছিলেন বাপ্পাদিত্য বসু। সেই বাপ্পাদিত্য বসু ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনের লগি-বৈঠার আন্দোলনের নামে ৪জনকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছিল। লগী-বৈঠা দিয়ে রাজপথে মানুষ হত্যার পর লাশের উপর নৃত্যের ছবি আমার দেশ প্রকাশ করেছে। এট-ই কী সাংবাদিকার নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে! তাদের মুখোশ উম্মোচন করাটাই কী অপরাধ!
সমকাল ও তাদের চেতনা ধারীরা নিহত ব্লগার রাজিবকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছে। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদের জীবন ও কর্ম তাঁরই লেখা ব্লগ থেকে প্রকাশ করেছে আমার দেশ। গোলাম সারোয়ারদের ভাষায় দ্বিতয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদের জীবন ও কর্ম জাতির সামনে তুলে ধরাটাই কী আমার দেশে পত্রিকার ‘অপসাংবাদিকতা’? শ্রদ্ধেয় গোলাম সারোয়ারের ভাষায় শাহবাগের বিষ্ময় হিসাবে যাদের আখ্যায়িত করা হয়েছে, সেই বিষ্ময় আন্দোলনের নেতাদের কর্ম ও ব্লগের লেখা গুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করাটাই কী সাংবাদিকার নীতি লঙ্ঘন ও সত্যের অপলাপ! সবিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই দৈনিক আমার দেশ সবকিছুর প্রমান হাতে নিয়েই এসব প্রকাশ করেছে। প্রমান উপস্থাপনের জন্য জনাব মাহমুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তথ্য মন্ত্রিকে। সরাসরি বসে সকলের সামনে তিনি প্রামন হাজির করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেননি তথ্য মন্ত্রি। উল্টা সরকারের পুলিশ বাহিনী দিয়ে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতন করানো হয়েছে।
ভারতীয় পত্র পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী ভারতের টাকায় পরিচালিত শাহবাগ আন্দোলনের সময় সমকাল ২৪পৃষ্ঠা পত্রিকার সঙ্গে বাড়তি রঙ্গিন চার পৃষ্ঠা দিয়েও সার্ক্যুলেশন কমেছে। এই বাড়তি পৃষ্ঠা দেয়ার পরও সমকাল পাঠকের কাছে বিক্রি করা হয় মাত্র ৮ টাকায়। বিপরীতে দৈনিক আমার দেশ মাত্র ১৬ পৃষ্ঠার পত্রিকা বিক্রি করা হয় ১২ টাকায়। তখন দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা করার পরও সাক্যুলেশন বেড়েছে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। মানুষ সত্য জানতে চায় বলেই সমকালের চেয়ে অনেক কম পাতার পত্রিকা অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমার দেশে কিনেছে পাঠক। এখানেই কী শ্রদ্ধেয় সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের গায়ে জ্বালা! তাদের ভাষায় হঠাৎ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অতি অল্প সময়ের সাংবাদিকতা জীবনে দুনিয়া জুড়ে একজন সত্য সন্ধানী সম্পাদক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেণ। এটাই কী মাহমুদুর রহমানের অপরাধ!
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরে ৬০টির বেশি মামলা দিয়েছে আমার দেশের বিরুদ্ধে। (লেখাটি ২০১৩ সালের ৩ জুন যখন প্রকাশ হয় তখন ৬০টি মামলা ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে দায়িছে ১১৮টিতে) কোন মামলা এখনো প্রমান করতে পারেনি। বরং মাহমুদুর রহমানকে গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন মামলায় আটকিয়ে রাখার অপচেস্টা করছে সরকার। সংবাদ প্রকাশের দায়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন মামলায় গ্রেফতার দেখাতে পারেনি। স্কাইপি স্ক্যান্ডাল প্রকাশের দায়ে একটি মামলা করেছে। সেই ঘটনা দিবালোকের মত সত্য। স্কাইপি স্ক্যান্ডলের দায় মাথায় নিয়ে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন। বিদায় নিয়েছেণ পদত্যাগ করে। দিবালোকের মত সত্য ও এতবড় জঘন্য অন্যায় জাতিকে জানানো যদি গোলাম সারোয়ারদের ভাষায় সংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন হয় সেটা আমার দেশ করেছে। সেই প্রতিবেদনটি লিখে এবং সংবাদের টোকাই হিসাবে স্ক্যান্ডাল খুজে বের করে আমিও তাইলে গোলাম সারোয়ারের ভাষায় সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছি! কিন্তু সাংবাদিক হিসাবে শপথ নিয়েছি সত্য অনুসন্ধান করবোই। গোলাম সারোয়ারদের মত ভারতীয় টাকায় পরিচালিত আন্দোলনের দলালি না করা যদি অপসাংবাদিকতা হয় সেটা আমার দেশ করে যাবে।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার শুরু থেকেই সংবাদকর্মী হিসাবে এখানে কাজ করছি। আমার দেশ এ পর্যন্ত যত সংবাদ প্রকাশ করেছে সবই সত্যেও উপর প্রতিষ্ঠিত। গোলাম সারোয়ারদের সম্পাদিত পত্রিকায় একপেশে সংবাদ প্রকাশের কারনে যেসব বিষয় গোপন করার চেস্টা করা হয়, আমার দেশ সেই বিষয় গুলো অকপটে তুলে ধরেছে জাতির সামনে। জাতির সামনে অনেক সত্য গোপন রেখে এক পেশে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেন গোলাম সারোয়ারের মত ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বিশ্বাসী সাংবাদিকরা। আর এটাই হচ্ছে তাদের সাংবাদিকতার নীতিমালা। তাদের গোপন করা সেই সত্য আমার দেশ জাতির সামনে তুলে ধরে। এখানেই হচ্ছে আমার দেশের সঙ্গে সমকালের মত একপেশে পত্রিকা গুলোর পার্থক্য। এজন্য কী মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশের প্রতি এত বিষোদগার!
(খ) ব্যক্তি মাহমুদুর রহমানকেও আক্রমণ করা হয়েছে তাঁর লেখায়। মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে নিবীড়ভাবে থেকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। মাহমুদুর রহমানের মত একজন সৎ, নির্ভীক ও সত্য প্রকাশে অদম্য সাহসী সম্পাদক বাংলাদেশে দ্বিতীয় জন নেই। মাহমুদর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদন গুলোতে কোন জায়গায় অসত্য বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে সবিনয়ের সঙ্গে জনাব গোলাম সারোয়ারের কাছে জানতে চাইব। একটি মিথ্যা বা অসত্য তথ্য মাহমুদুর রহমানের লেখা থেকে বের করার সুযোগ যদি তিনি পান সেটাই জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। তাঁর পত্রিকা রয়েছে সেখানে লেখা হোক মাহমুদুর রহমান কোন তথ্যটি ভুল উপস্থাপন করেছেন।
মাহমুদুর রহমান এবং গোলাম সারোয়ারদের মধ্যে পার্থক্যের একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করতে চাই। গোলাম সারোয়ারের এক সময়ের সম্পাদিত দৈনিক যুগান্তরে একবার হাইকোর্টের একটি বিষয়ে অসত্য তথ্য প্রকাশের অভিযোগে আদালত তলব করেছিল। বিচারপতি এম এ আজিজের আদালতে তাদের যেই ভাষায় উপাধি দেয়া হয়েছিল সেটা আর এখানে উল্লেখ করতে চাই না। তিনি নিজে স্বনামে তখন ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’ শিরোনামে একটি বিশেষ নিবন্ধ লিখেছিলেন। ক্ষমা চেয়ে আদালত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। আর দৈনিক আমার দেশ সুপ্রিমকোর্টের অবিচার নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের কারনে আদালত অবমাননার অভিযোগে তলব করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের অনুসন্ধানী লেখক হিসাবে আমি (অলিউল্লাহ নোমান) নিজেও সেই আদালত অবমাননা মামলার আসামী ছিলাম। মাহমুদুর রহমান সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সামনে দাড়িয়ে বলেছিলেন সত্য প্রকাশের দায়ে ক্ষমা চাইবেন না। আদালত তখণ ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’ বলে মাহমুদুর রহমান ও আমাকে দন্ড দিয়েছিল। এখানেই হচ্ছে আমার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনের গর্ব। ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স বলে আদালত প্রমান করে দিয়েছে মাহমুদুর রহমানের সম্পাদিত পত্রিকায় অসত্য লেখা হয়নি। সত্যের জন্য জেলদন্ড দেয়া হচ্ছে। গোলাম সারোয়ার ও মাহমুদুর রহমানদের পার্থক্য এখানে-ই। এখন পর্যন্ত আমার দেশের কোন সংবাদ আদালত বা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে অসত্য কেউ প্রমান করতে পারেনি। অনুরোধ থাকবে আমার দেশ যে বিষয়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন করে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেই প্রসঙ্গে সমকাল সত্য বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরবে। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারো বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারনে ঢালাও অভিযোগ করা গোলাম সারোয়ারের মত প্রবীন সম্পাদকের লেখায় মানায় না। আর যে ব্যক্তি জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচনে নিজের ছেলে সম প্রতিদ্বন্দ্বির কাছে ভোটে হেরে গিয়ে আদালতে মামলা করেন, সেই ব্যক্তির কাছে ন্যায়নীতি আশা করা যায় না। যিনি নির্বাচনে হেরে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে আদালতে প্রভাব খাটিয়ে বিজয়ী হতে চান সেই ব্যক্তির কাছে ন্যায় নীতি আশা করা অর বোকার স্বর্গে বাস করা একই কথা।
(গ)
জনাব গোলাম সারোয়ার লিখেছেন মাহমুদুর রহমানের লেখায় তাকেও নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। আমার যতটুকু মনে পড়ে একটি টেলিভিশণ টকশোতে শ্রদ্ধেয় গোলাম সারোয়ার মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। সেই আপত্তিকর মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন জনাব মাহমুদুর রহমানের লেখায়। মাহমুদুর রহমানের লেখায় নোংরা ভাষায় আক্রমন করা হয়নি। মাহমুদুর রহমান বলতে চেয়েছেন সম্পাদক হিসাবে গোলাম সারোয়ার বড় বড় কথা বলেন। তাঁর মুখে এসব কথা ও ন্যায়নীতি মানায় না। যুক্তি হিসাবে তিনি বলেছেন চার দলীয় জোট সরকারের সময় গোলাম সারোয়ার কীভাবে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সরকার থেকে অন্যায় সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। এখানে সবিনয়ের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই গোলাম সারোয়ার সম্পাদক হিসাবে তখন বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের কাছে যেতেন। তারেক রহমান ও তার রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনকে গোলাম সারোয়ার নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছেন। সমকালের ডিক্লারেশন নিতে ব্যবহার করেছেন তারেক রহমানকে। নিজের মেয়ের জামাই-এর উত্তরায় ৩ কাটার প্লটকে ৫ কাটায় উন্নীত করেছেন তারেক রহমানকে ব্যবহার করে। শুধু তাই ৩ কাটার ওই প্লট ছিল শতভাগ আবাসিক এলাকায়। এটাকে ৫ কাটায় উন্নীত করে বাণিজ্যিক এলাকায় নেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে ব্যবহার করে কক্সবাজারে পর্যটনের হোটেল লিজ নিয়েছেন মেয়ের জামাইয়ের নামে। নিয়েছেন সিএনজি স্টেশন। তাঁর স্ত্রী তদবীর করে তখণ চার দলীয় জোট সরকারের নিকট থেকে নিয়েছে সিএনপি স্কুটার ব্যবসার অনুমোদন। এখনো তারেক রহমান, তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস এবং পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর নাসির জীবীত আছেন। তারা সবাই এর সাক্ষী। আর একপেশে সংবাদ প্রকাশের কারনে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা পাঠকরা প্রত্যাখান করেছে। যা প্রমানিত হয়েছে ফেব্রুয়ারী মাসে শাহবাগের তথা কথিত আন্দোলনের সময়। আমার দেশ ১২ টাকা দামে ১৬ পৃষ্ঠা দিয়ে এক মাসে সাক্যুলেশন বেড়েছে এক লাখ ৩০ হাজার। অপর দিকে সমকাল ২৪ পৃষ্ঠার সঙ্গে বাড়তি রঙ্গিন ৪ পৃষ্ঠা জুড়ে শাহবাগের সেংবাদ প্রকাশ করে ৮ দামের পত্রিকা আগের চেয়ে তখন সাক্যুলেশন কমেছে। সাক্যুলেশনের দিক থেকে সমকাল কখনো আমার দেশের ধারে কাছেও ছিল না। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে আমার দেশের সাক্যুলেশনের সম পরিমান সাক্যুলেশন সারা দেশ জুড়ে সমকালের কখনো ছিল না। এখানে হচ্ছে গোলাম সারোয়ারদের ভাষায় হটাৎ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জন্মসূত্রে সম্পাদকদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য।
(ঘ) জনাব গোলাম সারোয়ার ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কমসূচিকেও কটাক্ষ করেছেন আপত্তিকর ভাষায়। তিনি মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানকে ‘দুর্বত্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। একদিকে শাহবাগের নাস্তিকদের অবস্থানকে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের বিষ্ময় বলে চিহ্নিত করেছেন। অপরদিকে মতিঝিলে এদেশের বরেণ্য আলেম, ওলামাদের তিনি আখ্যায়তি করেছেন ‘দুর্বত্ত’ হিসাবে। তাঁর এই লেখার মধ্য দিয়ে একপেশে চরিত্র ফুটে উঠেছে। এই একপেশে চরিত্রই হচ্ছে তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা। তিনি লেখায় উল্লেখ করেছেন শাপলা চত্তরে হেফাজতের তান্ডব। শাপলা চত্তরে হেফাজতের কোন তান্ডব হয়নি। বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমে শাপলা চত্তরে হেফজাতের তান্ডব দেখেছে এমন কোন প্রতিবেদন নেই। বরং শাপলা চত্তরে গণহত্যা চালিয়েছে গোলাম সারোয়ারের চেতনার সরকার। এর আগে আওয়ামী দুবৃত্তরা হেফজাতের উপর গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররমের আশে পাশে তান্ডব চালিয়েছে। রাজপথে হেফাজতের কর্মীদের দিনে দুপুরে আওয়ামী দুবৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেটা তাঁর চোখে ধরা পড়ে না। এটাই হচ্ছে গোলাম সারোয়ারদের সাংবাদিকতার নীতিমালা। যেই নীতি একপেশে, এক চোখ দিয়ে দেখে সেই নীতিকে পদদলিত করে সত্য প্রকাশ করাই হচ্ছে আমার দেশের কাজ।
তিনি লেখায় আরো উল্লেখ করেছেন, ৫ মে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি দু‘টি টেলিভশনে উস্কানি মূলক প্রচারণা চালিয়েছিল। এবিষয়ে তিনি সরকারের নজরে সেদিনই এনেছেন। কোন অনুষ্ঠান বা কর্মসূচি সরাসরি প্রচার করা কী উস্কানি মূলক কাজ? শাহবাগের আন্দোলন যদি দিনের পর দিন সরাসরি সম্প্রাচার করা যায়, শাপলা চত্তরের আন্দোলন সরাসরি সম্প্রাচার উস্কানিমূলক হবে কেন সেই প্রশ্নেরও উত্তর নেই তাঁর লেখায়। আসলে মতিঝিলে মানুষের উপস্থিতি সেদনি তাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। এটাই হচ্ছে মূল কথা। এসব বিষয়ে বিবেচনার জন্য পাঠকের আদালতেই এখন বিচারের ভার উপস্থাপন করলাম।
লেখক: দৈনিক আমার দেশের বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন