সড়ক দুর্ঘটনায় বড় বোনের ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ঈদ আসছে কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। বরং ঈদ এলে তার পরিবারের সকল সদস্যের বুকে বেদনা বাড়ে! ঈদকে তাঁরা ভয় পায়, ঈদ তাদের কষ্টগুলো তাজা করে দেয়!
প্রতিমন্ত্রীর এমন আবেগী স্ট্যাটাসের পর আমাদেরসময়.কমের এক পাঠক বলেছেন, মন্ত্রী শাহ্জাহান খাঁন সাহেব কি নিউজটা পড়েছেন?
বুধবার তারানা হালিমের লেখাটা আমাদেরসময়.কম এর ফেসবুক পেজ-এ শেয়ার হওয়ার পর অনেকেই মতামত জানিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের কমেন্টস তুলে ধরা হলো।
আক্তার উজ জামান লিখেছেন, শত শত মানুষকে যখন ক্ষমতার লোভে পাখির মত গুলি করে মারা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে তাদের পরিবার কি করে ঈদ করবে ভেবেছেন কি একবারও? নাকি শুধু নিজের বোনের ছেলের জন্যই আজকে কাঁদেন তাহলে বলব আপনি শুধু নিজের পরিবারের জন্য রাজনীতি করেন দেশের জনগণের জন্য নয়।
সানোয়ার হোসাইন বলছেন, আপনি শুধু আপনার পরিবারের জন্য মন্ত্রী নন। আপনি সারা বাংলাদেশের মন্ত্রী। আপনার কষ্ট যেমন শুনে কষ্ট পাই। তেমনি আরও খুন, গুম হত্যার খবর শুনে কষ্ট পাই।
জাফর মাহমুদের ভাষায়, মন্ত্রীর বাইরেও আপনি একজন মানুষ – পশু নন। আর মানুষ বলেই আপনার এই মানবিক অনুভুতি। আল্লাহ আপনাকে এই শোক সইবার তৌফিক দান করুন।
মো. মনিরুল ইসলাম মুনির লিখেছেন, একরামুল হকের পরিবারের আজ কি হচ্ছে ভেবে দেখুন?
মাহবুব রানা বলেছেন, শাহজাহান খানের অনুসারী ড্রাইভাররা কিছু মানে না। কয়েকজনকে পিষে দিলে কিছু তাদের যায় আসে না।
মুজিবর রহমানের ভাষায়, মন্ত্রী শাহ্জাহান খাঁন সাহেব কি নিউজটা পড়েছেন?
মোহাম্মাদ আসরাফুল ইসলাম লিখেছেন, তাহলে বুঝতে পারছেন স্বজন হারানো ব্যথা কি?
প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাস- ”পুরো লেখাটা পড়ুন”- লিখলাম এই জন্য যে আমার আজকের এই পোস্টটিতে মানবতাকে, মানুষকে, আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের হলেও কোন নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না।
রাজনৈতিক সে যে কোন পরিচয়, সে যে কোন পদ-পদবীর আগে আমরা মানুষ। আমাদের কষ্ট আছে, আবেগ আছে, ক্ষোভ আছে, দু:খ আছে, আর সব মানুষের মতই। আজ ভোর থেকেই একটা চিনচিনে কষ্ট, অস্বস্তি! আমি জানি কেন, আমার ছেলেরা জানে কেন, আমার বোন জানে কেন, আমার আল্লাহ জানে কেন!
‘ঈদ’ শব্দটি আমাদের পরিবারের জন্য কষ্টের, বেদনার! যে কোন ঈদই! আমার বোনের ছেলেটা মোনাশ ইউনিভার্সিটি পড়তে যাবে কত আনন্দ। ঈদের পরেই সে যাবে মালয়েশিয়া। ঈদের আনন্দে মেতে উঠবো সবাই। কিন্তু কোথায় গেল ঈদ! শুধু চালকের অসর্তকতায় প্রাণ চলে গেল আমার বোনের ছেলে সাইফ আহম্মেদ (অর্ণব) এর! তিনবার হাত উঠিয়ে ও চালককে থামতে বলেছিল। চালক তার জবানবন্দীতে বলেছে, অর্নব তিনবার হাত উঠিয়ে কার্ভাড ভ্যানটি থামানোর ইশারা করতেছে, তবে চালক থামালো না কেন? সে এই জীবনটিকে মূল্য দিবে না? এই একটি জীবন আমাদের জীবনের সব আনন্দ, হাসি, ঈদের আনন্দ সাথে নিয়ে চলে গেল! আমরা ঈদ ভয় পাই, ঈদ আমাদের কষ্টগুলো তাজা করে দেয়! আমার বাসায় সেমাই রান্না হয় না! আমি, আমার বোন, আমার ছেলেরা, আমার বোনের ছেলেরা ঈদে নতুন জামা-কাপড় পরি না! আমাকে অর্ণব ডাকতো ছোট মা বলে, (খালাতো মা-ই তাই মা)। কত বিতর্ক চালককে ঘাতক বলা যাবে কি যাবে না! এই বিতর্ক কেন? সব চালক কোনদিনই ঘাতক নন।
কিন্তু যারা একটু সচেতন হলে একটি জীবন বেঁচে যাবে জেনেও তা করেন না- তাদের কি সেবক চালক বলবো? দু:খিত বলতে পারলাম না। যেমন ঘুষ খেতে পারবো না, সন্ত্রাস করতে পারবো না। আমার রক্তে এসব নেই। যেমন সব চালককে ঘাতক বলতে পারবো না। তেমনি সব চালক কে নিরাপরাধ ও বলতে পারবো না।
জামিনে মুক্ত সেই চালক আজ পরিবার নিয়ে ঈদ করে! আমার বোনের অর্নব কোথায়? জামিনে মুক্ত সেই চালকের সন্তান নতুন জামা পরে! আমার বোনের অর্নবের জন্য জামা কিনতে চাই। কোথায় দিলেও পরবে?
আজ এলাকায় ঈদের শাড়ি বিতরণ করবো, হাসিমুখো জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা সবসময় হাসতে হয়। দু-চারটা কাপড় কম পড়লে মানুষ অসন্তুষ্টও হবে। ওরা কি কখনও জানবে আজ যে মানুষটি হাসিমুখে রোদে পুড়ে কাপড় দিচ্ছে ঈদের জন্য, সেই মানুষটির বড় বোন আজ কাঁদছে! সেই মানুষটির নিজেরও বুকের ভেতরটা কেবলই হু হু করছে! কাঁদা যাবেনা প্রকাশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলে কথা! ওদের যে আবেগ থাকতে মানা!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন