পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে নাড়ির টানে ছুটে চলেছেন শহরবাসী। তবে উল্টো স্রোতেও আছে কেউ কেউ। গ্রাম-মফস্বল থেকে ঈদের এই সময়ে রাজধানীতে এসেছেন একদল মৌসুমী শ্রমিক ও ভিক্ষুক। ঈদ উপলক্ষে একটু বাড়তি উপার্জন করাই তাদের প্রত্যাশা।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা রফিকুল হক গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। রাজধানীর শ্যামলীতে একটি রিকশার গ্যারেজে রাত কাটছে তার। ওেই গ্যারেজের মহাজনেরই একটি রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।
বাংলানিউজকে রফিকুল হক বলেন, সারাদিন রিকশা চালায়া মহাজনের জমার টাকা দিয়া যা থাকে তাই দিয়া বাচ্চাগো লাইগা আর আম্মার লাইগা জামা-কাপড় কিনা পাঠাইছি। বউয়ের লাইগা একটা শাড়ি নিয়া ঈদের পরদিন বাড়ি যামু।ঈদকেন্দ্রিক ভিক্ষুক জুম্মন বেগম। ছবি: বাংলানিউজবাড়তি এই আয়ের জন্য রফিকুলকে ঘুমাতে হয়েছে গ্যারেজের মাটিতে। রোজা রেখে সামান্য খাবারেই সেহরি আর ইফতার সেরেছেন বলে জানান তিনি।
ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আসার পরও ঈদের পর কেন বাড়ি যাবেন জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, গত দুই বছর ধইরা ঈদের আগে ঢাকায় রিকশা চালাইতে আসি। ঈদের আগে বাড়ি গেলে গাড়ি ভাড়া বেশি লাগে, পরে গেলে কম ভাড়ায় যাওন যায়।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায় হকারদের হাঁকডাক। তাদের মধ্যে একজন নরেন দাস। ফরিদপুর থেকে আগত এই কৃষি শ্রমিক ঈদের সময় এলাকায় তেমন কাজ না পাওয়ায় রাজধানীতে ছুটে আসেন ভালো রোজগারের আশায়।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ধর্মে হিন্দু হলেও আমার বাচ্চারাও ঈদে ভালা খাইতে চায়, নতুন জামাও চায়। এলাকার সবাই ঈদের দাওয়াত আমাগোরেও দেয়। আমিও পূজার দাওয়াত দেই। ঈদের সময় মার্কেটের সামনে বিভিন্ন আইটেমের জিনিস বেচি। রাস্তায় পানি, চিপস, বাদামও বেচি।
বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চঘাটেও দেখা মিলেছে মৌসুমী কুলিদের। তেমনই একজন এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের কুলি জয়নাল। বাংলানিউজের সঙ্গে গল্পে গল্পে তিনি বলেন, ঢাকায় কাজ পাওয়া কষ্টের। তবে কাজরিকশা চালক রফিকুল হক। ছবি:বাংলানিউজ
পেলে টাকার পরিমাণের জন্য সে কষ্টও নাই হইয়া যায়।
কুড়িগ্রাম থেকে আগত এই শ্রমিক বলেন, আমি প্রথমবার ঢাকায় ঈদের সময় কাজ করতে আইছিলাম আরো ৩ বছর আগে। আমার গ্রামের আরেক ভাইয়ের লগে আইছিলাম। হেয় এই কাম করে। কইছিলো কাজ পাওয়ায় দিবো। কিন্তু আইসা তা আর পারে নাই। পরে আমি এইখানকার মহাজনগো হাত-পাও ধইরাও কাজ পাই নাই। শেষে হাতে বাড়ি ফেরার ভাড়া আছিলো। হেই টাকা মহাজনের হাতে ধরায় দিলাম। হেয় দিনে একবেলা কাজ করনের সুযোগ দিলো। এর পরের বার থিকা সিস্টেম কইরা সারাদিন কাজের সুযোগ বানায় নিছি।
ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু শ্রমিক নয় ভিক্ষুকদের আনাগোনাও কম নয় ঢাকা শহরে। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় একহাতে একটি ছড়ি ও আরেক হাতে একটা ভিক্ষার থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জুম্মন বেগম। মানিকগঞ্জ থেকে আগত এই নারী বলেন, আমার পোলায় ঢাকায় থাকে। ঈদের আগে আমারে ঢাকায় আনে ভিক্ষা করার লাইগা। আমি অন্ধ দেইখা মাইনষে টাকাও দেয় বেশি। তাতে নাতি-নাতনি আর বউ-মাইয়ার লাইগা কিছু কিনা নিয়া
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন