‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ তাল গাছ সবার চেনা। চিরচেনা তালগাছ এখন দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মতো দিগন্তজোড়া মাঠে তালগাছের সারি তেমন চোখে পড়ে না। অথচ এই গাছটি অত্যন্ত লাভজনক। পরিকল্পিতভাবে ক্ষেতের আইলে তাল গাছ রোপণের উদ্যোগ নিলে আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও সহায়ক হবে।
সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইশ মাইল থেকে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে নলাম গ্রামের পথে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে- আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি তালগাছ, গাছে গাছে ধরে থাকা তাল, পাতার সঙ্গে লেপ্টে থাকা বাতাসে দোল খাওয়া বাবুই পাখির কারুকাজ করা বাসার সঙ্গে তাদের মিষ্টি মধুর কলতান।
শুধু সৌন্দর্যের দিক দিয়ে নয়, তালগাছ আমাদের অনেক উপকারে আসে। এ গাছের শক্ত কাঠ যেমন নানা কাজে লাগে, তেমনি রয়েছে ওষুধি গুণও। তাল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অনেক অঞ্চলেরই জনপ্রিয় গাছ, কারণ এর প্রায় সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয়, প্রায় কিছুই ফেলা যায় না। বাংলাদেশের সব স্থানে কম-বেশি তালগাছ চোখে পড়ে। তবে ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে ভালো তাল উৎপাদন হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে তালগাছ জন্মে। গাছ উচ্চতায় ২০ থেকে ২৫ মিটার হয়ে থাকে এবং ১৪০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
তালগাছ রোপণ করা খুবই সহজ। একটু মাটি খুঁড়ে আঁটি পুঁতে রাখলেই গাছ হয়। তাল কাঠের গোড়ার অংশ দিয়ে ডিঙি নৌকা তৈরি, ঘরের খুঁটি, আড়া, রুয়া, বাটাম, কৃষকের লাঙলের ঈষ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। গাছ শক্ত মজবুত গভীরমূলী বলে ঝড় তুফান, টর্নেডো, বাতাস প্রতিরোধ এবং মাটি ক্ষয় রোধে তাল গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
গণবিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বজ্রপাতে দিন দিন এর সংখ্যা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাল গাছ ঘর-বাড়ি ও সাঁকো তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কৃষি ও অর্থনীতির দিক থেকে এই গাছ খুবই দরকার।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক বলেন, তাল গাছ সংকটে দেশে বাবুই পাখির অস্তিত্ব এখন মহা-সংকটে। তাল গাছের অভাবে বাবুই পাখির আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। ভবিষ্যতে এই পাখি বিলুপ্তি হতে পারে বলে মনে করছেন।
গ্রামের সাধারণ মানুষ জানান, তালগাছের এসব উপকার ও মানুষের কল্যাণে বহুমুখী কাজে লাগে তালগাছ। কিন্ত অযত্ন অবহেলায় ও গুরুত্বের অভাবে তাল গাছ এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
সাভার উপজেলার নলাম গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবুল মুন্সী বলেন, আগের দিনে মুরব্বিরা প্রচুর পরিমাণে তালগাছ রোপণ করতেন। এই গাছের জন্য কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অনাদরে বেড়ে উঠে এই গাছ। এখন আর আগের মতো কেউ তালগাছ রোপন করে না।
তিনি জানান, কুড়িটি পূর্ণ বয়স্ক তালগাছের আয় থেকে একটি ছোট পরিবার সারা বছর চলতে পারে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন