দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে। এবারের ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। বড় ঈদগাহ, বড় জামাত। বেশি মুসল্লির সঙ্গে জামাত আদায় করলে দোয়া কবুল হয়- এমন আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক মুসল্লি। দু’বছর আগে ঈদের দিন জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে এবার ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার ঘটনাটিকে মাথায় রেখে মাঠ ও মাঠের আশপাশের এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়। আর এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার গভীর পর্যবেক্ষণে এবার থাকছে ড্রোন ক্যামেরা।
পুলিশ, র্যাব ছাড়াও থাকবে বিজিবি। এছাড়া সাদা পোশাকে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্যও থাকবে। মাঠে আর্চওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে নামাজের জন্য মাঠের দাগ কাটা, মেহরাব ও দেয়ালে চুনকাম করা, ওজুখানা তৈরি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ ঈদ জামাত আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন। মাঠ পরিদর্শনও করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের চেকপোস্টে হানা দেয় একটি জঙ্গিদল। ঈদগাহ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে টার্গেট করে জঙ্গিদের এই হামলার পরিকল্পনা জীবনবাজি রেখে রুখে দেন লড়া পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের বুকের তাজা রক্তে নির্বিঘ্ন হয় শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত। ঈদগাহ ময়দানের অনতিদূরের জঙ্গি হামলা এড়িয়ে চার লাখ মুসল্লি শরিক হন সবচেয়ে বড় এই ঈদুল ফিতরের জামাতে।
ওই বছর জঙ্গিরা হানা দেয়ায় গতবছর শোলাকিয়ার ঈদ জামাতকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এবারের ঈদজামাতকে ঘিরে আরো সুচারু ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে ড্রোন। নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য ২টি ড্রোন সারাক্ষণ উড়বে শোলাকিয়া ময়দানজুড়ে।
পুলিশ সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলা পুলিশ ড্রোনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৭ মে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ড্রোন দিয়ে পরীক্ষামূলক মহড়ার পর ৬ জুন থেকে নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য তিনটি ড্রোন উড়াচ্ছে।
শোলাকিয়ার মতো বিশাল জামাতের জননিরাপত্তায় ড্রোন ব্যবহার খুবই কার্যকর হবে- এমন চিন্তা থেকেই কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ এর আগ্রহে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ড্রোনের ব্যবহার যুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাঠ ও মাঠের আশপাশ এলাকায় ড্রোনে পর্যবেক্ষণ ছাড়াও ঈদগাহ ময়দানের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, আশপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আসা হচ্ছে কোজ সার্কিট ক্যামেরায় আওতায়।
মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। এর চারটিতে পুলিশ বাহিনী ও দুইটিতে র্যাব বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে ঈদজামাতের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করবেন। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, আরআরএফসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারেরও বেশি সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে।
ঈদগাহ ময়দানের মোট ২১টি প্রবেশ পথের মধ্যে মুসল্লিদের জন্য ছয়টি প্রবেশপথ উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। সেসব প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হবে ঈদগাহ ময়দানে।
এর আগে আরো অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টরে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে আগত মুসল্লিদের কেবল পাতলা জায়নামাজ ছাড়া ছাতা বা কোনো ধরণের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চার স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ ও সুচারু নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উড়ন্ত ড্রোন থেকে নজরদারি ছাড়াও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া নিরাপত্তা জোরদারের জন্য মাঠের ভিতর-বাহিরে পোশাক ও সাদা পোশাকে অন্যান্য বারের থেকেও বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন নামাজ আদায়ের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিদের থাকা-খাওয়া ও ইফতার আয়োজনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, শোলাকিয়ায় নির্বিঘ্নে মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। শোলাকিয়া স্পেশাল সার্ভিস নামে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে ঈদের দিন সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে কিশোরগঞ্জ আসবে। অন্যটি ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে সকাল পৌনে ৯টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। উভয় ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন